এমপি হতে চেয়েছিলেন সাহেদ

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ ওরফে শহীদ। রীতিমতো প্রতারণার জাদুকর। তার শিকার হয়ে অনেক ব্যক্তি পথে বসলেও কখনোই থেমে ছিলেন না তিনি। বরং একের পর এক নিপুণ শৈলীর প্রতারণা করে তা উৎরে গেছেন অবলীলায়।

তবে তার প্রতারণার লক্ষ্য শুধু ‘টাকা কামানো’ ছিল না; যশ ও খ্যাতির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এসব পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। তার রাজনৈতিক অভিলাষও ছিল। তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল এমপি (সংসদ সদস্য) হওয়া। এ জন্য ঢাকা থেকে মনোনয়ন ‘ম্যানেজ’ করে এলাকায় (সাতক্ষীরা) তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। প্রকাশ্যে প্রচারে না গেলেও সুকৌশলে তিনি কাজ করছিলেন।

বাগিয়ে নিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের তকমা। এরপর থেকে দিন দিন বেড়েই চলছিল তার ক্ষমতার দাপট। তার ভয়ে রীতিমতো তটস্থ থাকতেন অনেক ভুক্তভোগী।

সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালে পরীক্ষা ছাড়া করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্টসহ সাহেদের নানা অপকর্মের বিষয়টি উঠে আসে। এতে সাতক্ষীরায় আলোচনার কেন্দ্রে আসে তার নাম। সাহেদের উত্থান নিয়েও উঠে আসে নানা তথ্য। জানা যায় তার রাজনৈতিক অভিলাষের কথা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাহেদের মা সাফিয়া করিম ২০১০ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ পরিচয় কাজে লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সাহেদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন।

অথচ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনোই তার অংশগ্রহণ ছিল না। এরপরও ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়ে একাদশ জাতীয় সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের ১৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন। তাদের সবার নাম জানা গেলেও সাহেদ করিমের নাম ছিল অনেকটা অনুচ্চারিত। ঢাকায় মনোনয়ন ফরম জমাদানের সময় সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ নেতারা জানতে পারেন সাহেদও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। যদিও তিনি মনোনয়ন পাননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, সাহেদ মূলত ঢাকা থেকে মনোনয়ন ‘ম্যানেজ’ করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি বিভিন্নভাবে ‘টাকাও ছড়িয়েছেন’।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অতীতে ছোট ছোট প্রতারণা করলেও শাহ সিমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে প্রতারণা দিয়েই প্রতিষ্ঠিত কোনো কোম্পানির সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক প্রতারণা শুরু। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে শাহ সিমেন্ট কোম্পানির কাছ থেকে সাত হাজার বস্তা সিমেন্ট বাকিতে নিয়েছিলেন মো. সাহেদ। শাহ সিমেন্ট কর্তৃপক্ষকে তার দেওয়া সেই ব্যাংক চেক বাউন্স করেছিল। হাজার হোক সাবেক সেনা কর্মকর্তা! তাই তার বিরুদ্ধে শুরুতে মামলায়ও যায়নি শাহ সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। ঠিক কিছুদিন পরই ট্রান্সকম লিমিটেডের সঙ্গে এসি কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাহেদকে কাফরুল থানায় গ্রেফতার করার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয় শাহ সিমেন্ট কর্তৃপক্ষসহ আরও ছোট-বড় ২৫টি কোম্পানির প্রতিনিধি। সবার সঙ্গেই সাহেদ প্রধানমন্ত্রীর এডিসি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন। তবে তাদের কেউই ওই বিষয়টি যাচাই-বাছাই না করার কারণে বহাল তবিয়তেই রয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ডানা মেলছিল তার প্রতারণার পাখার। তবে ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও প্রতারণার পাখা ডানা মেলে সাহেদের। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক প্রতারণায় বহু মানুষকে পথে বসিয়েও বাগিয়ে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় একটি পাঁচ তারকা হোটেলের বিপরীতে একটি টেলিভিশনের একজন গণমাধ্যম কর্মী প্রথমে সাহেদকে ব্রেক দেন। পরবর্তীতে আরও দুইজন গণমাধ্যম কর্মী সাহেদকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক নামের নতুন তকমা দিয়ে ঘনঘন টিভি পর্দায় নিয়ে আসেন। সাহেদ হয়ে উঠেন একজন টিভি ব্যক্তিত্ব। প্রায় একই সময় সাহেদ সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে ‘বিডি ক্লিক ওয়ান’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি খুলে হাতিয়ে নেন গ্রাহকদের অন্তত পাঁচ শত কোটি টাকা। কিছুদিন গা ঢাকা দিলেও যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন তার সেই মিডিয়ার পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে। একপর্যায়ে তাদেরই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী প্রখ্যাত-বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে সেলফি উঠিয়ে নিজের বলয় বাড়াতে থাকেন সাহেদ। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুইজন শীর্ষ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর সাহেদ তার দুষ্টু পরিকল্পনার অনেকটাই অর্জন করে বসেন। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মাধ্যমেই তার পরিচয় হয় সাবেক এক কূটনীতিকের সঙ্গে। নিজের অতীত অপকর্ম আড়াল করে তার বদৌলতেই বাগিয়ে নেন ২০১৬-১৯ মেয়াদের আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ। একদিকে টকশো ব্যক্তিত্ব অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। সাহেদকে আর ঠেকায় কে!
ব্যক্তিগত কাজে সাহেদ ঢাকার বাইরে গেলেও পুলিশ প্রটোকল নিতেন সাহেদ। তাকে ফেরালে যদি তাদের কোনো ক্ষতি করে বসেন এমন আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট ইউনিট কমান্ডাররা প্রোটেকশন দিতে অনেকটাই বাধ্য হতেন বলে জানিয়েছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা।

তবে সাহেদের প্রতারণার বিষয়টি কিছুটা ছড়িয়ে পড়লে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে পুলিশ সদর দফতরকে একটি চিঠি দেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে তা থেমে যায়। উল্টো, বঙ্গভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব অনুষ্ঠানে ছিল সাহেদের সরব উপস্থিতি। উপসচিব মোহা. নায়েব আলী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে (স্মারক নং-৪৪.০০.০০০০.৭৫.০৮.০০৪.১৪.৭১৭) উল্লেখ করা হয় মোহাম্মদ শহীদ বিভিন্ন সময় নিজেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর/লে. কর্নেল এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ও সেনাবাহিনীর ১৪তম বিএমএ লং কোর্সের অফিসার হিসেবে নিজের পরিচয় প্রদান করে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছেন। তিনি বিগত ১৯৯৬-২০০০ সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ছিলেন মর্মেও পরিচয় প্রদান করে থাকেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোক। তিনি নানা ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে  সম্পৃক্ত। অভিযুক্ত ব্যক্তির নামে প্রতারণার দায়ে ইতিমধ্যে ৪২০ ধারায় ঢাকাস্থ বিভিন্ন থানায় ৩১টি এবং বরিশালে ১টি সর্বমোট ৩২টি মামলা রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে হওয়া ৩২টি মামলায় তিনি ২ বছর জেল খাটেন মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘রিজেন্ট’ নাম নিয়েও প্রতারণা:
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৮ সালে রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধনকৃত কোম্পানির রিজেন্ট গ্রুপের মালিক সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খোন্দকার। দীর্ঘদিন এই কোম্পানি সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তবে সাহেদ ২০১৪ সালে ‘রিজেন্ট গ্রুপ’ নামে আরও একটি কোম্পানি খোলার কিছুদিন পর ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে পুরনো রিজেন্ট গ্রুপের মালিক গোলাম আকবর  খোন্দকার আইনজীবীর মাধ্যমে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে সাহেদের দুই নম্বর ‘রিজেন্ট গ্রুপ’ বরাবরে লিগ্যাল নোটিস পাঠান। কিন্তু সাহেদ ক্ষমতাশালীদের কাছের মানুষ হওয়ায় আইনের তোয়াক্কা না করে ‘রিজেন্ট গ্রুপ’ নাম দিয়েই তার কুকর্মগুলো চালিয়ে আসছিলেন। ২০১৫ সালে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে রিজেন্ট গ্রুপের জমির সামনে দাঁড়িয়ে ‘ফিল্ড ভিজিট’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেওয়ার পর এ নিয়ে রীতিমতো তুলকালাম হয়। মেরিন ড্রাইভের সেই রিজেন্ট প্রোপার্টিজকে নিজের বলেও প্রচার দেন সাহেদ। পরে গোলাম আকবর চৌধুরী এ বিষয়ে জিডি করেছিলেন।

১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম রিজেন্ট গ্রুপের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যারিস্টার আকবর খন্দকার অনলাইনে সাংবাদিকদের বলেন, সাহেদ একজন বড় মাপের প্রতারক। একই নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান করে সাহেদ তাদের প্রতিষ্ঠানের নানা উদ্যোগকে নিজের বলে চালানোর ব্যবস্থা করছিলেন। সে কারণে পুরনো এই রিজেন্ট গ্রুপ তাকে আইনি নোটিসও পাঠিয়েছিল। ভিডিও বার্তায় আকবর বলেন, ফেক রিজেন্ট গ্রুপের ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যাবে সাহেদ আমাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ব্যবহার করছে। ২০১৫ তে গুলশান ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে দুই ব্যক্তি নিজেকে রিজেন্ট গ্রুপের পরিচালক পরিচয় দেন। যাদের আমি চিনি না। পরে জানতে পারি ২ কোটি টাকা করে উত্তরার রিজেন্ট গ্রুপের সাহেদকে দিয়েছেন, তাদের কাগজ দেওয়া হয়নি। পরে বুঝলাম সাহেদ বাটপাড়ি করে ব্যবসা চালান।

২০০৯ সালের জুনে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স থেকে তার দুটি কোম্পানির নামে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে ১৯ লাখ টাকার এসি এবং টিভি কিনে তা বাজারমূল্যের চেয়ে কমে গুলশান ডিসিটি মার্কেটে বিক্রি করে দিয়েছিলেন সাহেদ। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ওই বছরেরই ১৫ জুলাই সেখানে পুলিশ নিয়ে হাজির হয় ট্রান্সকমের লোকজন। সাতটি এসিসহ সাহেদকে গ্রেফতার করে কাফরুল থানা পুলিশ। সে সময়ই কাফরুল থানায় হাজির হন ২৫টি কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তাদের সঙ্গেও এমনি করে প্রতারণা করেছিলেন সাহেদ।

জানা গেছে, ৬ জুন সাহেদ রাইজিং শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি এবং রাইজিং রিয়েল এস্টেট প্রা. লি.-এর চেয়ারম্যান হিসেবে ১০টি দুই টন এবং ১৫টি দেড় টনের এসি সরবরাহের কার্যাদেশ দেন ট্রান্সকম গ্রুপকে। সে সময় তিনি জনতা ব্যাংক উত্তরা শাখার অনুকূলে ১১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার দুটি চেক দেন। ১২ জুন টাকা উঠাতে গেলে দুটি চেকই প্রত্যাখ্যাত হয়। এর আগে ট্রান্সকামের উত্তরা শোরুম থেকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি এসি ও একটি এলসিডি মনিটর টিভির বিপরীতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা তার অফিস থেকে সংগ্রহের কথা বলেন। পরবর্তীতে তার অফিসে গেলে টাকা না দিয়ে ইসলামী ব্যাংক উত্তরা শাখার তিনটি চেক দেন। সেগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে ২৬ জুন কাফরুল ও উত্তরা থানায় দুটি মামলা হয়।

সরকারি নথিতে ভয়ঙ্কর প্রতারক হিসেবে সাহেদের নাম উঠলেও সাহেদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি কেউ।  মেয়াদোত্তীর্ণ ‘রিজেন্ট হাসপাতাল’-এর সঙ্গেই কভিড চিকিৎসায় চুক্তিবদ্ধ হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ২১ মার্চ এই চুক্তিতে উপস্থিত ছিলেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ প্রশাসনের অনেক উচ্চ পর্যায়ের লোকজন। সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতিসহ দেশ-বিদেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সাহেদের ছবি দিয়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে জাহির করতেন সাহেদ। অনেকে অবশ্য ভড়কে গিয়ে তার প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। কামিয়েও নিয়েছেন বেশ কিছু। একে একে গড়ে তোলেন রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (মিরপুর), রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (উত্তরা), ঢাকা  সেন্ট্রাল কলেজ, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, হোটেল মিলিনা। অভিযোগ রয়েছে, আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি রয়েছে তার। যদিও এর একটিরও  কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। আর অনুমোদনহীন আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান  সোসাইটির ১২টি শাখা করে হাজার হাজার সদস্যের কাছ থেকে  কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও সাহেদ উত্তরার ৪, ৭ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে ভুয়া শিপিংয়ের ব্যবসা করেছেন। সেই ভুয়া প্রতিষ্ঠানের  নামেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, সাহেদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। মা সাফিয়া করিম ছিলেন স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের  নেত্রী। স্থানীয়ভাবে মায়ের নাম ভাঙিয়ে শুরু হয় তার প্রতারণা। সাতক্ষীরার এক মেয়েকে প্রথমে বিয়ে করলেও তার প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন তার প্রথম স্ত্রী। সাহেদ ফেসবুকে তার নিজের পরিচয় দিয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য; ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস  প্রেসিডেন্ট; রিজেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড, কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি, রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান।  সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ নামে একটি প্রতিষ্ঠানেরও চেয়ারম্যান তিনি।

পাথর জালিয়ালিতেও সাহেদ:
গত বছর থেকে সাহেদ পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহ করার কথা বলে বড় ধরনের টার্গেটে নামেন। প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে প্রথমে বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে পাথর কিনে ধুন্দুমার কাে  বিমোহিত করে ফেলেন সব পাথর ব্যবসায়ীকে। ভুক্তভোগীরা রিজেন্ট হাসপাতালের অফিসে এসে বিভিন্ন প্রভাবশালীর সঙ্গে সাহেদের ছবি দেখে বিশ্বাস খুঁজে পেতেন। পাথর ব্যবসায়ীরা একের পর এক পাথর পাঠাতে থাকেন সাহেদের ঠিকানায়। ওই পাথরই বাজারমূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি করে দিতেন সাহেদ। তবে কিছুদিন পার হওয়ার পরই তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। একের পর এক চেক বাউন্স হতে থাকে। ভুক্তভোগীদেরই একজন সিলেটের জৈন্তা এলাকার মাওলা স্টোন ক্রাশারের মালিক হাজী সামসুল মাওলা। গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই আমাদের তিনি পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পিএস। তার অফিসেও আমি দেখেছি প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি। আমরা তার কথা বিশ্বাস না কইরা উপায় আছে? ৩০ লাখ টাকার পাথর আমি পাঠাইয়া দিই। তবে তার প্রতিটি চেক বাউন্স করে। পরে উত্তরা থানায় জিডি এবং সিলেট আদালতে আমি মামলা করি। আমার মতো সিলেটের আমিন এবং আকদ্দসও সাহেদের প্রতারণার শিকার। তার পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে পারভেজ ও নাসির যোগাযোগ করতেন।

সাহেদের প্রতারণার শিকার জুলফিকার আলী ভুট্টো নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সাহেদ করিমের মালিকানাধীন রিজেন্ট কেসিএস পূর্বাচল প্রজেক্টে বালু সরবরাহের কাজ পেয়েছিল তার প্রতিষ্ঠান রুসাফা কনস্ট্রাকশন। সিলেট থেকে বালু সরবরাহের পর সাহেদ করিম তার পাওনা ৪২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৫৯ টাকা  দেননি। উল্টো এক দিন অফিসে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে পেটানো হয়। তারপর ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে সই নিয়ে মেরে গুম করে ফেলার হুমকি দেন। গত বছরের ৩১ অক্টোবর এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুট্টো।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন