শুক্রবার , ২৩ আগস্ট ২০২৪ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

এমপি হওয়ার আগ থেকেই বাগমারায় ত্রাসের রাজত্ব কালামের, বিনাপ্রদ্বিন্দ্বিতায় স্ত্রী হছিলেন মেয়র

Paris
আগস্ট ২৩, ২০২৪ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ ছিলেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র। তিন বার মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি তাহেরপুরজুড়ে চালান ত্রাসের রাজত্ব। তারেপুরে হিন্দদের জমি দখল থেকে শুরু করে পৌরসভার সমস্ত কাজ তিনি নিজেই বিভিন্ন নামে-বেনামে করতেন। এভাবে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে কালাম কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন। সেই সঙ্গে তাহেরপুর জুড়ে চালাতে থাকেন ত্রাসের রাজত্ব। সাবেক বিতর্কিত এমপি এনামুলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে। বাগমারা ১৫টি ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ নেন এনামুল আর দক্ষিণ বাগামার বলে পরিচিত তাহেরপুর ও গোয়ালকান্দির নিয়ন্ত্রণ নেন কালাম। সর্বশেষ গত সংসদ নির্বাচনে মেয়র থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কালাম। এ নির্বাচনের আগে মনোনয়ন পেয়েই গোটা বাগমারায় ত্রাস সৃষ্টি করেন কালাম। নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি তাহেরপুর পৌরসভায় স্ত্রী সায়লা পারভীনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জয়ী করেন। কালামের ভয়ে অন্য কেউ আর মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

সূত্র মতে, গত সংষদ নির্বাচনে একের পর ত্রাস সৃষ্টির কারণে কয়েক দফা শোকজ করা হয়েছিল কালামকে। পরে নির্বাচনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও করে নির্বাচন কমিশন। এর পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে গোটা বাগমারাজুড়ে শুরু করেন পুকুর খনন। তাহেরপুর পৌর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে বাগমারা এবং পাশের দুর্গাপুর উপজেলাতেও মানুষের জমি জোর করে দখল করে পুকুর কাটা শুরু করেন কালাম। ফলে মাত্র ৭ মাসের মধ্যে বাগমারায় অন্তত তিন হাজার বিঘা পুকুর গড়ে উঠে কালামের দাপটে।

এলাকাবাসী সূত্র মতে, কালাম মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে সংষদ নির্বাচনে অংশ নেন। এতে তাহেরপুর পৌরসভায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সে নির্বাচনে নিজের স্ত্রী সায়লা পারভীনকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দেন কালাম। তাহেরপুর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে এতে তার ভয়ে অন্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন কালমের স্ত্রী সায়লা পারভীন। সায়লার আপন ভাই অর্থাৎ কালামেসর শ্যালক উপল খন্দকার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র তুললেও তিনিও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ফলে নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন।

বাগমারার আর্ট বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ওই নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কালামের অত্যাচারের ভয়ে নির্বাচনে আমি আর দাঁড়াতে পারিনি। আগের বার ভোটে অংশ নিলেও ত্রাাসের রাজত্ব কায়েম করে আমাকে পরাজিত করে মেয়র হয়েছিলেন কালাম। এর মধ্যে আবার কালাম এমপি হয়ে গেছিলেন। সেখানে মেয়র প্রার্থী স্ত্রী সায়লাকে নির্বাচিত করতে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠতেন কালাম। সে ভয়ে মেয়র পৌর নির্বাচনে আমি আর ভোটে দাঁড়ায়নি। অন্য কোনো প্রার্থীও সাহস পায়নি।’

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালাম মেয়র থাকা অবস্থায় তাহেরপুর বাজারে অন্তত ৮কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি দখল করে নেন। ওই জায়গাটি তাহেরপুর মন্দিরের নামে থাকলেও তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ সেটি একসময় ভোগ-দখল করত। এর পর কালাম মেয়র হয়ে সেটি দখল করে ৫ তলা ফাউন্ডেশনের মার্কেট গড়ে তোলেন। কালাম মেয়র থাকাকালীন নিজেই বিভিন্ন নামে-বেনামে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ করতেন। পৌরসভার রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি তারই বন্ধুদের নামের লাইসেন্সে তিনি নিজেই করতনে। এভাবে মাত্র চার-পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছিলেন কালাম। দ্বিতীয় বার মেয়র হয়ে একইভাবে সম্পদ ও অর্থ গোড়ে তুলেন কালাম। সঙ্গে অন্তত ৩০টি পুকুর গড়ে তোলেন। তৃতীয় বার মেয়র হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন কালাম।

বাগমারার ঝিঁকড়া এলাকার আজগর আলী বলেন, মেয়র থাকা অবস্থায় কালামের রাজত্ব ছিল তাহেরপুরকেন্দ্রীক। আর বাকি অধিকাংশ এলাকায় রাজত্ব চালাতেন সাবেক আরেক বিতর্কিত এমপি এনামুল। কিন্ত গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হতে গোটা বাগমারাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব পালন করেন কালাম। মনোনয়ন পাওয়ার পরের দিন থেকেই কালামের লোকজন নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারপিট, বাড়িতে বাড়িতে হামলা-মামলা শুরু করেন। এতে গোটা বাগমারায় আতঙ্ক নেমে এসেছিল।

যুবদল নেতাকে গুলি করার ঘটনায় গত ১৭ আগস্ট সাবেক এমপি কালাম তাঁর স্ত্রী ও তাহেরপুর পৌর সভার মেয়র সায়লা পারভীনসহ ২২ জনের নামে মামলা করেছেন আব্দুল মতিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, গত প্রায় ১২ বছর ধরে বামগারায় কালাম বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কালাম অগাধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন এর মাধ্যমে। মানুষের জমি দখল করে জোর করে পুকুর করে কেটে কালাম অন্তত ৩০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার সহযোগীরাও পুকুর কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পুকুর কেটে এক যুবলীগ নেতা সোহেল রানা অন্তত ২৫ কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন গত সাত মাসে।’

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপি কালামের গ্রামের বাড়িতে একটি দোতলা আলিশান বাড়ি রয়েছে। রাজশাহী শহরের বড় বনগ্রাম এলাকায় রয়েছে ১০ কাঠা জমি, পদ্মা আবাসিক এলাকায় রয়েছে ফ্লাট এবং ঢাকায় রয়েছে একটি ফ্লাট। এর বাইরে পুকুর রয়েছে অন্তত এক হাজার বিঘা। তবে গত ৫ আগস্ট থেকে কালাম স্ব-পরিবারে পলাতক থাকায় তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

স/আর

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর