এমপি ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা, ওমর প্লাজার ফ্ল্যাট-দোকানপাট বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে আরবিট্রেশন (সালিশি) মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে অংশীদারের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি কোম্পানীর ব্যাংক হিসাব থেকে কয়েক কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া, প্রতারণা, হুমকি-ধামকি এবং জোর করে একটি ভবন দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলায় আদালত আগামী ১৪ অক্টোবর ওমর ফারুক চৌধুরীকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত থীম ওমর প্লাজার কোনো ফ্ল্যাট ও দোকানপাট বিক্রির ব্যাপারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা জেলা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন রাজশাহী নগরীর থীম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএম মোস্তাফিজুর রহমান। ওমর ফারুক চৌধুরী ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। মামলায় মোস্তাফিজুর রহমান কোম্পানীর অন্য দুই অংশীদারকেও বিবাদি করেছেন। তবে মূল অভিযোগ তোলা হয়েছে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

মামলায় বলা হয়েছে, ওমর ফারুক চৌধুরী থীম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামক কোম্পানীর ৩৫ শতাংশের মালিক। আর মোস্তাফিজুর রহমান মালিক ২৫ শতাংশের। এছাড়া দু’জন পরিচালকের মালিকানা রয়েছে ২০ শতাংশ করে। থীম রিয়েল এস্টেট কোম্পানী দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে। এরপর ভবনের ফ্ল্যাট ও দোকানপাট বিক্রি করে। রাজশাহীতেও ‘থীম ওমর প্লাজা’ নামের একটি ১০তলা ভবন নির্মাণ করেছে এই কোম্পানী। আর ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বন্দ্ব এই ভবন নিয়েই।

ভবনটি রাজশাহীর নিউমার্কেট এলাকায়। ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ এই জমির মালিক ওমর ফারুক চৌধুরী। নিজের জমিতে বহুতল ভবন গড়ে তুলতে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ থীম রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। অথচ জমিটি তিনি আগেই আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রেখেছিলেন। তারপরও ওমর ফারুক চৌধুরী থীমের সঙ্গে চুক্তি করে প্রতারণা করেছেন বলে মামলার আরজিতে বলা হয়েছে। আর এ কারণে কোম্পানী এখন আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, চুক্তি হয়ে যাওয়ায় কোম্পানীর এমডি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যথাসময়েই ভবনটি নির্মাণ করেছেন। এতে কোম্পানীর প্রায় ৩১ কোটি টাকা দেনাও হয়েছে। ভবনটির ফ্ল্যাট ও দোকান বিক্রি করে এই টাকা পরিশোধের কথা রয়েছে। কিন্তু কোম্পানীর চেয়ারম্যান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী গত ১৭ জুলাই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে বলেছেন, এই ভবন এখন তার। এতে এমডির কোনো অংশ নেই। ভবনে তাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়েছে, ওমর ফারুক চৌধুরী থীম রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর ব্যাংক হিসাব থেকে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা নিজের হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।এছাড়া তিনি থীম ওমর প্লাজায় বাটা জুতা কোম্পানীর সাথে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘ওমর সন্স’ এর চুক্তি করেছেন। কিন্তু তিনি বাটাকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন থীম রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর হিসাব থেকে। আর বিক্রয়লব্ধ টাকা জমা করছেন ওমর সন্সের হিসাবে। এতে থীম রিয়েল এস্টেট কোম্পানী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানী থীম ওমর প্লাজায় বিনিয়োগ করতে গিয়ে অন্য প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারেনি। ফলে চট্টগ্রামের হালিশহরে কোম্পানীর একটি প্রকল্প রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ঢাকার ইব্রাহিমপুরে আরেকটি প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে আছে। আর কোম্পানীর সর্বস্ব বিনিয়োগ করে নির্মাণ কাজ শেষ করা রাজশাহীর অত্যাধুনিক ভবনটি দখলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। অথচ এই ভবনে তার মালিকানা মাত্র ৩৫ শতাংশ।

মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মোস্তাফিজুর রহমান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ওমর ফারুক চৌধুরী তার সঙ্গে চরম অশোভন আচরণ করেন এবং অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। অস্বীকার করেন টাকা লুটপাটের অভিযোগও। মোস্তাফিজুর রহমান বাধ্য হয়ে ফারুক চৌধুরীকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। পরে আদালতে সালিশি মামলা করেন।

এ মামলায় আদালত আগামী ১৪ অক্টোবর ওমর ফারুক চৌধুরীকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত থীম ওমর প্লাজার কোনো ফ্ল্যাট ও দোকানপাট বিক্রির ব্যাপারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর ১৪ অক্টোবর ওমর ফারুক চৌধুরী আদালতে উপস্থিত না হলে একতরফা শুনানি ও বিচার শুরু হবে বলেও আদালতের আদেশে বলা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, মামলা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। মামলার অবগতিকরণ কোন নোটিশও তিনি পাননি। এমনকি কোন লিগ্যাল নোটিশও তাকে পাঠানো হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

স/শা