এটা সরকারের দেউলিয়া বাজেট: ঐক্যফ্রন্ট

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে সরকারের দেউলিয়া বাজেট বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন।

নেতারা বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম পুরো বাজেটে এক-তৃতীয়াংশই হল ঘাটতি, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। কিন্তু এ বাজেট সম্বন্ধে আমরা যে কথা ইতিমধ্যেই বলেছিলাম সেটাই সঠিক, অর্থাৎ এটা সরকারের পুরো দেউলিয়া বাজেট। সরকারকে আগামী বছর ঋণ নিতে হবে সাকুল্য ৫ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। যেখানে আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজেট হল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার। অর্থাৎ ঋণ হল বছরের সর্বমোট বাজেট বরাদ্দের চেয়েও বেশি। এরকম মারাত্মক অর্থনীতির পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে অতীতে কখনো হয়েছে বলে জানা নেই।

ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- জোটের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ও বিকল্প ধারা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী।

জোটের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এই করোনা মহামারীতে আমাদের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় আমরা দেখছি বর্তমান প্রেক্ষিতে দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। মূলত এদের কথা মনে রেখেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা দরকার ছিল। এই মুহূর্তে উন্নয়নখাতে বরাদ্দ কমিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তার দিকে বেশি নজর দেয়ার দরকার ছিল যাতে করে বিশেষভাবে যারা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জীবন ও জীবিকার সমাধান হয়।

এ দেশে প্রতিবছর গতানুগতিকভাবে বাজেট তৈরি করা হলেও এই বাজেটটি কিন্তু সেভাবে করা ঠিক হয়নি উল্লেখ করে নেতারা বলেন, আমরা একটি কঠিন সংকটের সামনে এসে পড়েছি। বিশ্বজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। এই সময়ে আমরা যদি এটাকে আপৎকালীন বাজেট বলেই চিহ্নিত করতাম, আমাদের মনে হয় মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সেটা ভালোই হতো।

সরকার বাজেটের জন্য যে প্রণোদনা দিয়েছে সে অর্থের সোর্স কোথায় জানতে চেয়ে বিবৃতিতে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, আমাদের বর্তমান বাজেটের জন্যে এই পরিস্থিতিতে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, প্রথমে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি, পরে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি এবং সর্বশেষ আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে অতিরিক্ত প্রণোদনা, এই রিসোর্স কোথা থেকে আসবে?

কৃষিখাতে আরও ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কৃষিখাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমরা মনে করি, এই বরাদ্দ এবং ভর্তুকি প্রয়োজনের তুলনায় সম্পূর্ণ অপ্রতুল।

এই বাজেটে বড়লোকদের সুবিধা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের কর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বলতে হলে উল্লেখ্য যে স্বর্ণ আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার মানে, স্বর্ণের দাম কমবে। স্বর্ণ ব্যবহার করেন কারা? সাধারণত ধনিক শ্রেণি। সেখানে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশেষ করে এই লকডাউনের সময়ে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য যে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট, তার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এ বাজেটে কাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে করা হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, বর্তমান অর্থবছরে সরকারের সারা বছর যে ঋণ নেয়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি ঋণ প্রথম ৬ মাসেই সংগ্রহ করেছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে সে পরিবর্তন ঘটানোর কারণেও সরকার অনেকটা বিপাকে পড়েছে। যারা অল্প সঞ্চয় করে, বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জের মানুষ ডাকঘরে সঞ্চয় করে। সে ডাকঘরের সঞ্চয় বন্ধ করে দিয়ে তাদের সম্পূর্ণ ব্যাংকিং নির্ভর করে দেয়া হয়েছে। আর্থিক যে ইন্সটিটিউশন, সেগুলো যদি ঠিকমতো কাজ না করে সেখানে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে।

নেতারা আরও বলেন, আবার যারা বড় উদ্যোক্তা রয়েছেন তারা নিজেরাই নিজেদের ব্যাংক থেকে বিরাট অংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছে। সেগুলো পরিশোধ করেনি। বারবার সরকারের কাছে দেন দরবার করে সেগুলো মওকুফ করে নিয়েছে। অন্যদিকে আগামী বাজেটের পুরো ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের পরেও সরকারকে ব্যাংকিং খাত থেকে যে পরিমাণ ঋণ সহায়তা নিতে হবে তা মেটানো সত্যিই দুষ্কর হয়ে পরবে। এ পরিস্থিতিতে যে কথা বলা হচ্ছে না, কিন্তু অর্থনীতিবিদদের আলোচনায় আছে, সেটা হল বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে ইচ্ছে মতো কারেন্সি নোট ছাপিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়া।