‘এখান কম্বলের জন্য অনেক ঘুরছোং, কাইয়ো দেয় নাই’

‘ধল্লার পারোত বাড়ি। যে ঠাণ্ডা বাতাস হাকাইছে, জারোতে গডগড করি কাঁপপ্যার নাগছি। এখান কম্বলের জন্য অনেক ঘুরছোং, কাইয়ো দেয় নাই।’

কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের ধরলা পারের বৃদ্ধা আজিমন। বয়স প্রায় ৮০। বাস করেন বাঁধের পাশে। স্বামী নেই। ছেলেরা পৃথক। চেয়েচিন্তে দিন কোনো রকমে দিন চলে তাঁর।

আজ শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে সদর উপজেলার ধরলা নদীর ঘাট বাংটুর ঘাটে দেখা হয় আজিমনের সঙ্গে আমাদের এই প্রতিনিধির। তখন ঠাণ্ডায় রীতিমত কাঁপছিলেন আজিমন। কথা বলছিলেন কাঁপতে কাঁপতে। সকাল থেকে ঘন কূয়াশা আর তীব্র ঠাণ্ডায় ঘরের ভেতরও তাঁর মতো অনেক বয়স্ক মানুষ কাবু হয়ে পড়েছেন। শীতের দাপট বেড়ে যাওয়ায় বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে।

কাঁঠালবাড়ীর চেরেঙ্গা গ্রামে মাটিকাটার কাজে নিয়োজিত কিছুসংখ্যক নারী শ্রমিক কাজ বন্ধ করে খড় কুটোতে আগুন দিয়ে তাপ নিচ্ছিলেন। নারী শ্রমিক কল্পনা বেগম বলেন, ‘ঘণ্টা খানিক কাজ করি আর পাই না। ডালি কোদাল ধরা যায় না। এলা আগুন জ্বালে বসি আছি।’ আজিজা, সহিরণসহ ১০ জন নারী শ্রমিকের অবস্থাও প্রায় একইরকম।

সরেজমিনে সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ও হলোখানার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়া নারী ও শিশুরা খড়কুটো জ্বালিয়ে উত্তাপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। দিনমজুররা কাজে যেতে পারছে না। বোরো রোপণের জমি তৈরি ও সবজির পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত দিনমজুররা জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে হাত-পা অবশের মতো হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর-সর্দিতে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ‘সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। তারপরও অতি দুঃস্থ কেউ বাদ পড়লে পরবর্তীতে তাঁকে কম্বল প্রদান করা হবে।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘শনিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে হিমেল বাতাসের কারণে বেশি ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে।’ আগামী ২-৩ দিন এই পরিস্থিতি থাকবে বলে জানান তিনি।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ