এক নেতায় ভর করে চলছে রাজশাহী জেলা যুবলীগ, যাচ্ছে-তাই অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। তিন বছর মেয়াদী এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের মার্চে। কিন্তু এখনো সেই ন্যূব্জ কমিটি চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুতে যেন এক নেতায় পরিণত হয়েছে এই সংগঠনটি। সভাপতি আবু সালেহ পদ ধরে বসে আছেন প্রায় দেড় যুগ ধরে। এতে করে তিনিও হয়ে উঠেছেন অনেকটা সৈরাতান্ত্রিকের মতো। ফলে সংগঠনে নেই শৃঙ্খলার বালাই। জেলা উপজেলা যুবলীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের নানা অপকর্মে জড়িত থাকার খবর গণমাধ্যমে এলেও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উল্টো টাকার বিনিময়ে সেসব ঘটনা দফারফা করার চেষ্টা করে থাকেন জেলার নেতারা। জেলা যুবলীগের পূণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় ওঠে ব্যাপক পদ বাণিজ্যের অভিযোগও। এতে করে সাবেক শিবির ক্যাডাররাও জেলা যুবলীগের পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন বলে কেন্দ্রেও করা হয় অভিযোগ। তার পরেও মেয়াদহীন সেই কমিটি এখনো বহাল। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, দ্রুত ভঙ্গুর এই কমিটি বিলুপ্ত করে আহবায়ক বা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেওয়া হোক। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

দলীয় সূত্র মতে, ২০১৬ সালে রাজশাহী জেলা যুবলীগের সম্মেলনে দ্বিতীয় বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন আবু সালেহ। আর ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন খালেদ ওয়াসি কেটু। কিন্তু ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কেটু মারা যাওয়ার পরে কেন্দ্রের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়ায় সভাপতি আবু সালেহ তাঁর পছন্দের ব্যক্তি যুগ্ম-সম্পাদক আলী আজম সেন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। ফলে পূর্ণ সাধারণ সম্পাদকহীন রাজশাহী জেলা যুবলীগ অনেকটায় স্বেচ্ছাচারি সংগঠনে রুপ নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

সংগঠনটির একজন সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জেলা যুবলীগের অনেক নেতাকর্মী নানা অপকর্মে জড়িত। কারও কারও বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ থাকলেও সাংগঠনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উল্টো টাকা-পয়সার বিনিময়ে সেসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিতায় সম্প্রতি জেলা পুঠিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমনুজ্জামান সুমনের বিরুদ্ধে সনাতনধর্মী এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে অবৈধ মেলামেশার পর সেই অশ্লিল ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুমনের বিরুদ্ধে সাংগঠনকিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

আরকে নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমও তেমন নাই। দলীয় কর্মসূচিগুলোও তেমন পালন করা হয় না। একনায়কতন্ত্র বাস্তবায়ন করায় জেলা যুবলীগের কর্মসূচিতে তেমন নেতাকর্মীরা অংশ নেন না। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও নেই কোনো সম্নয়। ফলে জেলার নেতাদের সঙ্গেও রয়েছে সভাপতি আবু সালেহ দূরুত্ব।’

দলীয় সূত্র মতে, জেলা যুবলীগের ৯টি উপজেলা, ১৪টি পৌরসভা এবং ৭৮টি ইউনিয়নসহ শতাধিক ইউনিট কমিটির মেয়াদ কয়েক বছর আগে শেষ হয়েছে। এসব কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রায় নেই। পৌর উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর নেতারা নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন। এতে সংগঠনটির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এজন্য জেলা যুবলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলনের দাবি জানিয়ে আসছেন নেতাকর্মীরা অনেক দিন ধরে। সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বরের বর্ধিত সভাতেও নেতাকর্মীরা এ দাবি জানান।

দলীয় সূত্র মতে, জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান পল্বব হলেন সভাপতি আবু সালেহ’র ভাতিজা। ৫ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে মুতুল হোসেনের গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদিতে। তিনি থাকেন নগরীর উপশহরে। একটি প্রাইভেট কম্পানীতে চাকরিও করেন। তিনজন যুগ্ম-সম্পাদকের মধ্যে এখন রয়েছেন মাত্র সৈকত হোসেন। অপর দু’জনের মধ্যে আলি আজম সেন্টু ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। আর গোলাম রাব্বানী কেন্দ্রীয় সদস্য হওয়ায় জেলা থেকে পদত্যাগ করেছেন। ১১ জন সহসভাপতির মধ্যে একজন সরাসরি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দেও অভিযোগ দেওয়া হয় শুরুতেই। অপর ১০ জনের মধ্যে একাধিক নেতা নানা বিতর্কে বিতর্কিত। এর বাইরে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও অনেকেই রয়েছে নানা অপকর্মে জড়িত। কিন্তু এদের কারও বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ বলেন, ‘ইউনিয়ন নির্বাচনের কারণে সম্মেলন করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সফর করছে। সাংগঠনিক সফর শেষ হলেও হয়তো সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘পুঠিয়ার একজন নেতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ উঠলেও আমরা তার কোনো তথ্য-উপাত্ত পাইনি। তবে বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্র বিষয়টি তদন্ত করছে। এর বাইরে আর কোনো নেতার বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নাই।’