একের পর এক তরুণীকে যেভাবে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছেন মডেল হৃদয়

ঘটনার শিকার তরুণীরা উচ্চাভিলাষী। তাঁরা ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ সাইট টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের চেষ্টা করছিলেন। কেউ আবার মডেল হতে আগ্রহী। হৃদয় ওই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন। তিনি তাদের ধর্ষণ করতেন; ধর্ষণের পর নানা ভয় এবং মডেল বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে নিজের বাসায় আটকে রাখতেন।  গে্রপ্তারকৃত হৃদয় সম্পর্কে এমনই তথ্য দিচ্ছেন  পুলিশ কর্মকর্তারা। জবানবন্দিতেও হৃদয় এসব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন।

কথিত মডেল দেওয়ান রসুল হৃদয় (২৮) সামাজিক অ্যাপ ‘টিকটক’ ও ‘লাইকি’তে ভিডিও তৈরি করে আপলোড করতেন। তরুণীদের মডেল বানানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলতেন। গত সোমবার রাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, তিনি চার তরুণীকে তাঁর রাজধানীর ভাটারার কুড়িলের বাসায় ১১ দিন রেখে পর্যায়ক্রমে তাঁদের তিনজনকেই ধর্ষণ করেছেন, একজনের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে নিপীড়ন চালিয়েছেন।

ভাটারা থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার শিকার চার ছাত্রীর মধ্যে একজন থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ তদন্ত করতে গেলে কথিত মডেল হৃদয়ের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। কুড়িলের বাড়িটি হৃদয়ের নিজস্ব। পরিচয় গোপন করে মেয়েদের বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটে হিসেবে রাখতেন। সেখানে ঘটনার শিকার চারজন ছাড়াও আরেক তরুণীকে পাওয়া গেছে। ওই তরুণী তাঁর প্রতি কোনো যৌন নিপীড়ন হয়নি বলে দাবি করেন।

হৃদয়ের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এক তরুণী নিজের চেষ্টায় কিছু করবেন বলে মা-বাবাকে না জানিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা রিং রোডে বান্ধবীর বাসায় চলে আসেন। দুই বান্ধবী একসঙ্গে থাকবেন বলে মনস্থির করেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর তাঁদের ফেসবুকে পরিচিত আরেক বান্ধবীর আমন্ত্রণে গাজীপুরে একটি রিসোর্টে পুল পার্টিতে যান। সেখানে যাওয়ার পর ওই বান্ধবী হৃদয়ের সঙ্গে তাঁদের দুজনের পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁদের আশ্বস্ত করেন, প্রয়োজন হলে হৃদয় তাঁদের থাকার ব্যবস্থাও করে দিতে পারবেন।

এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর হৃদয় ফোন দিয়ে দুই তরুণীকে জানান, চাইলে তাঁরা ভাটারার কুড়িলে তাঁর বাসায় থাকতে পারেন। সেখানে শুটিং হবে বলেও জানান তিনি। কথামতো পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর দুই বান্ধবী ওই এলাকায় যান। এরপর হৃদয় তাঁদের বাসার নিচতলায় একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। দুই দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে হৃদয় তাঁকে তাঁর তৃতীয় তলার বাসায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে একপর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের কথা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেন।

এদিকে হৃদয়ের ফেসবুকে ‘টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে’—এমন বিজ্ঞাপন দেখে গত ২০ সেপ্টেম্বর আরো দুই শিক্ষার্থী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদেরও হৃদয় শুটিংয়ের কথা বলে নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। পরদিন সকালে তাঁদের মধ্যে একজনকে বাসার তৃতীয় তলায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। ওই রাতেই আরেক শিক্ষার্থীর ওপর চলে পাশবিকতা। এভাবে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার শিক্ষার্থীকে নিজের বাসায় আটকে রেখে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ ও নিপীড়ন চালান হৃদয়।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম শারাফুজ্জামান আলমগীরের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবাবন্দি দেন হৃদয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে ও আদালতে হৃদয় চার তরুণীকে টিকটক লাইকির মডেল হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও নিপীড়ন করার কথা স্বীকার করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এলিন চৌধুরী সাংবাদিকদের  বলেন, পর্যায়ক্রমিক ধর্ষণের বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। পরে সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কুড়িলের পিনাকল পাম্পসংলগ্ন ৮৫ নম্বর বাসা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় ধর্ষণের শিকার তিনজন ও যৌন হয়রানির শিকার একজন পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ধর্ষক হৃদয়ের প্রতারণার শিকার তরুণীদের মধ্যে তিনজন কলেজ এবং একজন স্কুলের ছাত্রী। দুজনের বয়স ১৮ বছরের কম। গত ১৬ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনাগুলো ঘটে।

ভাটারার ওসি আরো জানান, হৃদয় তাঁর সাবেক স্ত্রীর করা মামলায় দেড় বছর জেলে ছিলেন। সে সময় তাঁদের বিয়েবিচ্ছেদ ঘটে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ