“একটা লোক পেলেই চলে যাচ্ছি”

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘনিয়ে আসছে ঈদ,তাই ব্যস্ততা সবখানে। শেষ সময়ে ঈদের কেনাকাটায় যখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নগরবাসি তেমনি ব্যস্ততা বেড়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। রাজশাহীতে অনাকাঙ্খিত হারে বেড়েছে ব্যাটারীচালিত অটোরিকশার ব্যবহার। আর তাতেই বাড়ছে দূর্ভোগ। বাড়তি যানবাহনে যানজটের দূর্ভোগ এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোন স্থানেই যানবাহন বেশিক্ষণ দাড়াতে দেয়া হচ্ছে না। বাড়তি পরিবহন নিয়ে বিপাকে রয়েছেন শ্রমিকরাও।

 

নগরীর সাহেববাজার, লক্ষীপুর, সাধুরমোড়, রেলগেট এলাকায় ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা আর উল্কা দেখলে মনে হবে যেন ভারতের কুম্ভের মেলা। তিল ঠায় দাড়ানোর উপায় নেই। মাত্রাতিরিক্ত এসব যানবাহনের কারণে একদিকে যেমন বাড়ছে যানজট অন্যদিকে বিপুল বাহনের কারণে তা এক সমস্যার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে শ্রমিকদের জন্যও। এসব শ্রমিকদের সিংহভাগই অন্যের বাহন ভাড়ায় নিয়ে চালান। প্রতিদিন অন্তত ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু বিপুল পরিমান যানবাহন রাজশাহীতে চলাচলের কারনে জমার টাকা তুলতেও হিমসিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে নগরীতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অতিরিক্ত যানবাহন শহরে প্রবেশ করছে। সারাদিন শহরে থাকার পর সন্ধ্যা হলেই শহরের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে দিনব্যাপী একপ্রকার চাপের সৃষ্টি হচ্ছে নগরীতে। সন্ধ্যার পর স্থানীয় অটোরিকশাগুলো বেশি চলাচল করছে। ঈদের বাজারে ক্রেতাদের ঘনঘন যাওয়া আসার কারনে এবং প্রতিযোগীতামূলক বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে একটি লোক পেলেও গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করছেন অটোযান শ্রমিকরা। কারণ বাড়তি যানজট এড়াতে এক স্থানে বেশিক্ষণ দাড়াতে দিচ্ছে না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

রেলেগেট থেকে বাজারগামি এক অটোরিকশা শ্রমিক আশরাফুল আলম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, রোজা থেকে সারাদিন ঘুরে জমার টাকা তুলতে পারছিনা। সব লোকজন বাজারেই। আর বাজারে অটো দাড়াতে দিচ্ছে না। অনেক কষ্টে চারটা লোক তুলে রেলগেট এসে আবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। অটোরিকশা এতোই আছে যে লোক না পেলেও দৌড়াতে হচ্ছে। তাই কোন মতে একটা লোক পেলেও চলে যাচ্ছি।

 

সাইফুল বলেন, আমাদের বিপদ আমরা নিজেরাই ডেকে আনছি। অনেকেই দিনে এক ব্যবসা করছে রাতে এসে অটো চালাচ্ছে। আর যারা পেট চালানোর দায়ে অটো চালায় তারা পড়ে যাচ্ছে বিপদে।

 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে নগরীর সাধুরমোড় এলাকায় প্রতি আধাঘন্টায় ৪০টির অধিক অটোরিকশা যাতায়াত করছে। বাজার থেকে অধিকতর অটোরিকশা সাধুরমোড়, মোন্নাফের মোড় এলাকায় অবস্থান করছে। নগরীর তালাইমারী রুটে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ। আর জিরোপয়েন্ট থেকে রেলগেট এলাকায় প্রতি মিনিটে প্রায় ২০টি অটোরিকশা চলাচল করছে। বাড়তি এ বাহনের সংখ্যা নিয়েও হতাশ শ্রমিক মালিক সমিতি।

 

ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা আর থ্রি হুইলার চলাচল বৃদ্ধিতে নানামুূখী সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে ক্ষুদ্র যান ও পথচারীদের। সড়কের অধিক জায়গা জুড়ে অবস্থান করায় ক্ষুদ্র যান এবং পথচারীরা পারপারে ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর এতে ছোটখাট দুঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। বিপাকে আছেন ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবাসয়ীরাও।
শহিদুল ইসলাম নামে ফুটপাতের গার্মেন্টস পণ্য বিক্রেতা বলেন, ক্রেতাদের দাড়ানোর মতো অবস্থান থাকলেও অটোরিকশা গুলো কোন নিয়ম মেনে চলছে না। প্রায়ই ক্রোতদের ধাক্কা দিয়ে সজোরে এগিয়ে যাচ্ছে। আবার ক্রেতাদের সাথে হঠাৎ হঠাৎ তর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে ব্যবসা করতে গেলেও সমস্যা হচ্ছে।

জিরো পয়েন্ট এলাকায় হাবিবুল বাশার নামক পথচারী বলেন, এদের মধ্যে কোন শৃঙ্খলাবোধ নেই। কোন নিয়ম না মেনে পারলে গায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দিবে। আবার কিছু বলতে গেলেও অসাদারচরণ করে। প্রশাসনের লোক এসে তাদের বিতাড়িত করলেও কিছুক্ষণ পর আবার যা-তাই থেকে যায়।

 

অটোরিকশার চলাচলে কোন নিয়ম মানা হচ্ছে না। আর এতে নেই কোন বয়স সীমা। শিশুদের অনেকক্ষেত্রে এসব রিকশা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। অন্যদিকে বড়দেরও নেই কোন ভয়। কোন নিয়মনীতির উপেক্ষা না করে সামান্য জায়গা পেলে তা দখলে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে যানজট অন্যদিকে অপচয় হচ্ছে মূল্যবান সময়ের। নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে এমন ভীড় দেখে বিকল্প সড়ক দিয়ে অথবা পায়ে হেটেই গন্তব্যে পৌছাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

 

বেকারত্ব দূরীকরণের এই পরিবহনটি এখন যেন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। বাড়তি পরিবহনের কারণে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অটোমালিকেরা অন্যদিকে তা বিপর্যস্ত করছে দৈনন্দিন জনজীবন। অনেকটা বেপরোয়াভাবেই চলাচলা করছে পরিবহনগুলো। অটোরিকশার বাড়তি চাপ সামাল না দেয়া গেলে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ জনগন। তাই অতিরিক্ত যানবাহন বর্জন করে সীমাবদ্ধ পরিবহন ব্যবস্থার দাবি জানগনের।

স/শ