উৎসবমুখর পরিবেশে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন

সম্মেলনে নাচ পরিবেশন করছেন নৃত্যশিল্পীরা

আমজাদ হোসেন শিমুল:

‘সম্মেলনমঞ্চে দেশ-মাতৃকার গান। জাতির অবিশংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাওয়া গানগুলো সম্মেলনে আসা হাজারো ছাত্র-জনতাকে ব্যাপকভাবে করেছে আন্দোলিত। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যদি বেঁচে থাকতেন আর রাজশাহী কলেজ চত্ত্বরে ছাত্রলীগের এই সম্মেলনে আসতেন তাহলে এই আয়োজন দেখে নিশ্চিত খুশি হতেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য ঘাতক, মীর জাফরদের নির্মম বুলেটের আঘাতে সপরিবারে তাকে শহীদ হতে হয়েছে।’

কথাগুলো প্রতিবেদকের নয়। রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের চোখ ধাঁধানো আয়োজন দেখে সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধ এভাবেই তার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছিলেন।

সত্যি যে তাই। মহানগর ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে- এই বৃদ্ধের মত অনুষ্ঠানস্থলে আসা হাজার হাজার ছাত্রজনতাসহ সবাইকে বিমোহিত করেছে। অনুষ্ঠানের চলাকালে মাঝেমধ্যেই দেশাত্ববোধক গান আর নাচ। এসময় ঢোল, খোল আর বাদ্যযন্ত্রের বাজনায় রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনার চত্ত্বরে অন্যরকম এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিলো।

এর ঠিক পরেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়- রাজশাহী সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ জাতীয় পতাকা ও ছাত্রলীগের পতাকা উত্তোলন করেন।

উদ্বোধনকালে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির সভাপতি সারা বাংলার ছাত্রজনতাকে উদ্দেশ্য করে যে জ্বালাময়ী বক্তব্য প্রদান করেছেন তা উপস্থিত সবাইকে করেছে বিমোহিত। তিনি তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া এই ছাত্রলীগকে জাতির জনকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ-মাতৃকার সেবায় ছাত্র সংগঠনটিকে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করার উদাত্ম্য আহ্বান জানান।

বক্তব্য রাখছেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, করোনার কারণে আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্রলীগের সম্মেলন দিতে পারিনি। রাজশাহী থেকেই শুরু করলাম এজন্য যে, বঙ্গবন্ধু যখন নিজ হাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠন করেন তখন একজন শীর্ষ নেতা ছিলেন এই রাজশাহীর। তাই আমরা রাজশাহী থেকেই ছাত্রলীগের এই সম্মেলন শুরু করলাম। ধীরে ধীরে দেশের সকল স্থানে ছাত্রলীগের সম্মেলন করা হবে।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিক নিদের্শনামূলক বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ দেশের সর্ববৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠন। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করে দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে দেশ গড়ার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’

ছাত্রলীগ সভাপতির সম্মেলনের উদ্বোধনের পর নগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এরপর সম্মেলনে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা, ছাত্রলীগের গণশিক্ষা সম্পাদক আব্দুল্লাহ হীল বারী, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. শফিকুজ্জামান শফিক, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর তৌহিদুর রহমান কিটু, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. হাবিব খান, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, রুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নাইম রহমান নিবিড়, রুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপু সংক্ষেপে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন।

বুধবার সকাল ১০ থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ চত্ত্বরে এই সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীঘ সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস যে পড়বে, তার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কোন কিছুই অজানা থাকবে না।

সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ অতিথিবৃন্দ

মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি লিটন বলেন, ২০১৫ সালে বিএনপি-জামাত, মৌলবাদী চক্র সারাদেশের মতো রাজশাহীতে আগুন সন্ত্রাস করেছিল। সে সময় রাজশাহীতে ছাত্রলীগের নেতবৃন্দ বিএনপি-জামাতের সেই আগুন সন্ত্রাস রুখতে সাহসী ভুমিকা পালন করেছিল, আমরা ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে আগুন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছি।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ ফিনিক্স পাখির মতো একটি সংগঠন। ছাত্রলীগকে যতবার আঘাত করা হয়, ধংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়, ততবার আবার নতুন করে জেগে ওঠে ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ নতুন করে এগিয়ে যায়। ছাত্রলীগ যত সুশৃঙ্খল হবে, পরিশীলিত হবে, চাঁদাবাজ মুক্ত হবে, ছাত্রলীগ তত সামনের দিকে অগ্রসর হবে।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন খায়রুজ্জামান লিটনসহ অতিথিবৃন্দ

মেয়র লিটন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। ছাত্রলীগে মাই ম্যান তৈরি করার সুযোগ নেই। যে যোগ্য তাকেই নেতা নির্বাচিত করতে হবে। কারণ আগামীতে ছাত্রলীগ থেকেই এমপি, মন্ত্রী ও মেয়র নির্বাচিত হবে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দিবে।

সম্মেলনে সমস্বরে গান পরিবেশন করছেন শিল্পীরা

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোন অবৈধ ও অন্যায় কাজকে প্রশয় দেয় না। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আগামীতে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে, রাজশাহী অঞ্চলের নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রে মূল্যায়ন করা হবে।

মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক মো. রেজভী আহমেদ ভূইয়া। সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব।

এএইচ/এস