উপাচার্য ভবন ছেড়ে এবার প্রশাসন ভবনের সামনে রাবিতে ‘এডহক’ নিয়োগপ্রাপ্তরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কর্মস্থলে পদায়নের (যোগদান) দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যের বাসভবন ছেড়ে এবার প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন সম্প্রতি ‘এডহক’ নিয়োগপাপ্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আগামী রবিবার সকাল ৯টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়ে পদায়ন না করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে নিয়োগপ্রাপ্ত আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই সাথে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহার পদত্যাগও দাবি করবেন তারা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে- গত ৬ মে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান ১৩৮ জনকে বিশ^বিদ্যালয়ে ‘এডহক’ এ নিয়োগ প্রদান করেন। কিন্তু বর্তমানে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা স্বপ্রণোদিত হয়ে গত ৮ মে তাদের কর্মে যোগদানের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। যার কারণে নিয়োগ প্রদানের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও তারা কর্মে যোগদান করতে পারছেন না। সঙ্গত কারণেই গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে একটানা বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান কমসূচি অব্যাহত ছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে আন্দোলন চলাকালীন বেশ কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান নিয়োগপ্রাপ্তররা। কিন্তু তারপরও উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা আন্দোলনকারীদের নিকট আসেননি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমন বলেন, ‘আমাদের লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আমাদেরকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সঙ্গে সাক্ষাত করতে বলেন এবং আমাদের আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন। তার কথামতো- আন্দোলনরত সবার পরামর্শ অনুযায়ী আমরা রাত ৮টার দিকে চলমান অবস্থান কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করি। বৃস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তার (আনন্দ কুমার সাহা) সঙ্গে সাক্ষাত করতে প্রশাসন ভবনে তার দপ্তরে যায়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি আমাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি। তার এমন আচরণে আমরা স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি- তিনি আমাদেরকে ‘মুখে মধু অন্তরে বিষ’ ঢেলে দিচ্ছেন।’

আরেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি রাবি শাখার সাবেক আহ্বায়ক মতিউর রহমান মর্তুজা বলেন, ‘আমাদের ধারণা অনেকটা পরিস্কার যে, তিনি (আনন্দ কুমার সাহা) আমাদেরকে কর্মস্থলে পদায়নের ব্যবস্থা করবেন না। এজন্য আগামী রবিবার (২৭ জুন) জুন সকাল থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত (অফিস চলাকালীন) অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব এবং উপ-উপাচার্যের পদ থেকে তার (আনন্দ কুমার সাহা) পদত্যাগও দাবি করবো।’

‘এডহক’ এ নিয়োগপ্রাপ্ত ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন বলেন, ‘একটি গণমাধ্যমে ইউজিসির তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসি বাতিল করার এখতিয়ার রাখে না। এটি বাতিল করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে। এজন্যই উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমাদের নিয়োগ বাতিলের গভীর ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন থেকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এই ১৩৮ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিকে কর্মস্থলে যোগদানের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অর্থ কমিটির (এফসি) সভা কিংবা সিন্ডিকেট সভা করতে দেবো না।’

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নিজ দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা জব পেয়েছেন বলে দাবি করছে তাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাত করার কথা ছিল। কিন্তু আমি জানতে পারলাম, আলোচনা তাদের মত না হলে প্রশাসন ভবনের সামনে তারা অবস্থান নেবে। এজন্য আমি তাদের সঙ্গে আর সাক্ষাত করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিত আকারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করেছি।’

তবে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার বক্তব্য চরম দুর্ভিসন্ধি উল্লেখ করে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান সুমন বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও নিরাপত্তাহীনতা ঘটানোর মত কোনো কর্মকান্ড করিনি। বরং আমাদের আন্দোলনের অন্যতম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিনের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো সময় ক্যাম্পাসে আমাদের ওপরও হামলা হতে পারে। বরং আমরাই চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। এজন্য আমাদের নিরাপত্তা চেয়ে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই মতিহার থানা এবং মহানগর পুলিশ কমিশনার বরারব একটি লিখিত আবেদন পেশ করবো।’

উল্লেখ্য, কতিপয় শিক্ষকদের বাধায় অর্থকমিটি ও সিন্ডিকেটের শেষ সভা করতে না পেরে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার শেষ কর্মদিবসের দু’দিনে (৫ ও ৬ মে) ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাদেশের ১২(৫) ধারায় অর্পিত ক্ষমতা বলে আন্দোলনকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ১৩৮ জনকে এডহক নিয়োগ দিয়ে যান। কিন্তু উক্ত নিয়োগকে ওই দিনই ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর ৮ মে রুটিন উপাচার্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এডহক নিয়োগপ্রাপ্তদের পদায়ন (যোগদান) স্থগিত করেন। ২৩ মে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তবে তদন্ত কমিটি এই নিয়োগ ছাড়াও নীতিমালা শিথিলের পর নিয়োগ দেওয়া ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগও বাতিলের সুপারিশ করে।

স/রি