সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া যে কিশোরীদের ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে, তাদের পরিবারের সঙ্গে কোন যোগাযোগ না করেই সরাসরি কলকাতায় এনে ‘ডাম্প’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গের শিশু-কল্যাণ বিভাগ।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া থেকে এমনই এক বাংলাদেশী কিশোরীকে তার পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে বলে সরকারি কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে আজ কলকাতার ট্রেনে উঠেছেন – কিন্তু কলকাতায় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বিবিসিকে জানিয়েছে তারা এই মেয়েটি বা তার পরিবারের ব্যাপারে কিছুই জানে না।
ফলে পাচার হওয়া বহু বাচ্চা ছেলেমেয়ে উদ্ধার হওয়ার পরও কলকাতায় এসে নতুন করে দুর্ভোগে পড়ছে।
কক্সবাজারের কাছে একটি গ্রামের মেয়ে সানোয়ারা খাতুন তার সম্পর্কিত বোন জেসমিনের সঙ্গে ভারতে ঢুকেছিল প্রায় আড়াই বছর আগে।
দু’বছর আগে বিজয়ওয়াড়া রেলস্টেশনে তাকে যখন চরম অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তার আগেই তাকে একাধিকবার যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
গত দু’বছর অন্ধ্রের একটি সরকারি হোমে কাটানোর পর অবশেষে সে আজ ওই রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কলকাতার ট্রেনে উঠেছে, নিজের পরিবারের সঙ্গে আবার দেখা হবে এই আশা নিয়ে।
বিজয়ওয়াড়াতে নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের প্রকল্প অধিকর্তা ভি কৃষ্ণকুমারী বিবিসিকে বলছিলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশক্রমে আজই মেয়েটিকে নিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা কলকাতা রওনা হয়েছেন। কলকাতায় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বা সিডব্লিউসি মেয়েটিকে তার পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এর আগে আমরা বাংলাদেশ দূতাবাসকেও মেয়েটির ব্যাপারে চিঠি লিখেছিলাম, কিন্তু কোনও জবাব পাইনি।”
কিন্তু ঘটনা হল, কলকাতায় সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন ইন্দ্রাণী গুহব্রহ্ম বিবিসিকে জানিয়েছেন, মেয়েটির পরিবারের ব্যাপারে কোনও খোঁজখবর দূরে থাক – মেয়েটি যে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মঙ্গলবার বিকেলের আগে সেটাই তারা জানতেন না।
তিনি বলছেন, “এই মেয়েটি যে আসছে সে সম্পর্কে আমাদের বিন্দুবিসর্গ ধারণা ছিল না। কোথায় তার বাড়ি, পরিবারে কে আছে কিছুই জানি না। কিছুদিন আগে দিল্লি থেকেও খুলনার ঢোলপুর গ্রামের একটি ছেলেকে সেখানকার পুলিশ এসে প্রায় জোর করে আমাদের কাছে জিম্মা করে গেছে!”
ফলে খুলনার সেই বাচ্চা ছেলেটি বা কক্সবাজারের সানোয়ারা – ভারতের যে প্রান্তেই উদ্ধার হোক না কেন, সে রাজ্যের সরকার সটান তাদের এনে কলকাতায় ফেলে দিয়ে যাচ্ছে বলে বলছেন মিস গুহব্রহ্ম।
তার কথায়, “ইদানীং একটা ধারা শুরু হয়েছে উদ্ধার হওয়া ছেলেমেয়েরা বাংলা বললেই তাদের কলকাতায় এনে ফেলে দাও। পরে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখছি তারা বাংলাদেশী। কিন্তু বিদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল – দূতাবাস, বাড়িতে খোঁজখবর, পাসপোর্ট-ভিসা এই সব ব্যবস্থা করে সেই প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায়ই দেড়-দুবছর লেগে যায়।”
এদিকে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে অন্ধ্রপ্রদেশ নিষ্ক্রিয়তার যে অভিযোগ তুলেছে, সে ব্যাপারে দিল্লিতে দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, এই নির্দিষ্ট ঘটনাটি সম্পর্কে তারা অবহিত নন – কিন্তু একজন বাংলাদেশী নাগরিকের পরিচয় নিশ্চিত করতে সময় লাগে বেশ অনেকটাই।
ধরে নেওয়া যায় সানোয়ারা খাতুনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না – কিন্তু তার আগে পর্যন্ত সে কলকাতায় কীভাবে সিডব্লিউসি-র জিম্মায় থাকবে?
ইন্দ্রাণী গুহব্রহ্ম বলছেন, “ফেলে তো আর দিতে পারব না। কাল বুধবার সে এসে পৌঁছলে একটা হোমের ব্যবস্থা করা হবে, আমি কথা বলে রেখেছি। আর এই বয়সের একটা মেয়ে শাটল ককের মতো এখানে-ওখানে কতদিন আর ঘুরবে? খারাপ পথে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে, ফলে শেষ চেষ্টা একটা আমাদের করতেই হবে।”
সানোয়ারা যতদিন কলকাতার আশ্রয় কেন্দ্রে থাকবে, তার মধ্যে বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করারও চেষ্টা চলতে থাকবে।
সে চেষ্টা সফল না-হওয়া অবধি তাকে থাকতে হবে আবার সেই সরকারি হোমেই।
ফলে দিল্লি বা বিজয়ওয়াড়া, চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোর থেকে উদ্ধার হওয়া বহু বাংলাদেশী কিশোর-কিশোরীকেই এখন কলকাতার সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে – কিন্তু সেখানে নতুন করে শুরু হচ্ছে তাদের আরও এক দুর্দশা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা