উত্তর মিয়ানমারে ব্যাপক নৃশংসতা ঘটতে যাচ্ছে, ভীত জাতিসংঘ

জাতিসংঘ মিয়ানমারে একটি ‘বৃহত্তর মানবাধিকার বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির উত্তরে হাজার হাজার সৈন্য সমাবেশের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তারা এ আশঙ্কা করছে। ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বিশৃঙ্খলা চলমান রয়েছে।

মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুস, যিনি শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের ওপর বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করছিলেন, বলেন- তিনি তথ্য পেয়েছেন যে হাজার হাজার সৈন্য এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র অশান্ত অঞ্চলে (উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

অ্যান্ড্রুস বলেন, গবেষণায় আরো ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে সামরিক সরকার মানবতার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল। মিয়ানমারের এই অংশের মানুষ আরো গণনৃশংসতা অপরাধের জন্য প্রস্তুত, আমাদের সকলেরও প্রস্তুত থাকা উচিত।

স্থানীয় একটি পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠীর মতে, অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির ভিন্নমতের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী দমন অভিযানে ১১০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং আট হাজার জনেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে।

অ্যান্ড্রুজ যোগ করেছেন, এই কৌশলগুলো ২০১৬-১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আগে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করেছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে যায় যখন নিরাপত্তা বাহিনী একটি ক্ল্যাপডাউন শুরু করে। জাতিসংঘ সেটিকে ‘গণহত্যা হতে পারে’ বলে মন্তব্য করে।

অ্যান্ড্রুজ দেশগুলোকে অনুরোধ করেছিলেন, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অর্থ, অস্ত্র দিয়ে মদদ না দেয় এবং তাদের এমন কাজের বৈধতা দান প্রত্যাখ্যান করে।

অবশ্য সোমবার, মিয়ানমারের সামরিক প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য কারাগারে বন্দি পাঁচ হাজার জনেরও বেশি মানুষকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। আসন্ন আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) শীর্ষ সম্মেলন থেকে তার প্রধানকে বাদ দেওয়ার জন্য ‘সামরিক শাসনকে একটি বড় বাধা’ মন্তব্যের কদিন পর এ পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রানার বার্গেনার আলজাজিরাকে বলেছেন, তিনি আশঙ্কা করছেন দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে। ‘মানুষের হাতে হাতে আইফোন এবং মিয়ানমারে তথ্যের প্রধান উৎস হলো ফেসবুক এবং টুইটার।’ যোগ করেন তিনি। ‘তারা হাল না ছাড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদি তারা হাল ছেড়ে না দেয় এবং সহিংস ও ক্ষুব্ধ হয়, তাহলে সহিংসতা আরো সহিংসতা সৃষ্টি করবে’ যা ‘একটি পূর্ণ বিকশিত অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘর্ষের’ দিকে নিয়ে যাবে।’

অ্যান্ড্রুজ বলেন, মিয়ানমারের বাহিনী আড়াই লাখ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছে। যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের অনেককে নির্যাতন করা হয়। তিনি বলেন, এর ফলে কয়েক ডজন মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, তিনি বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট পেয়েছেন যে শিশুদেরও নির্যাতন করা হয়েছে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ