উইঘুর নিপীড়ন: চীনকে প্রথমবারের মতো শাস্তি দিল যুক্তরাষ্ট্র

চীনের উইঘুর ও অন্যান্য তুর্কিক মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নিপীড়ন বন্ধে প্রথমবারের মতো কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এতে দুই দেশের মধ্যকার টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী পলিটব্যুরোর সদস্য চেন কুয়াংগুসহ আরও তিন কর্মকর্তাকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন।

করোনাভাইরাসের প্রভাব বিস্তার রোধ ও হংকংয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় গত কয়েক মাস ধরে বেইজিংয়ের প্রতি ওয়াশিংটনের বৈরিতা বেড়ে চলছে। সে ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আগেই ধরে নেয়া হয়েছিল।

কালোতালিকায় নাম ওঠায় যুক্তরাষ্ট্র এই চীনা কর্মকর্তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান ও সম্পদ জব্দ করতে পারবে। এ ছাড়া কোনো মার্কিন নাগরিকও তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন না।

সংখ্যালঘুদের কঠোর বিরুদ্ধে মনোভাবের মূল উদ্যোক্তা বলা হয় জিনজিয়াংয়ের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান চেন কুয়াংগুকে।

তিনি ছাড়া নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া বাকি দুজন হলেন জিনজিয়াং জননিরাপত্তা ব্যুরোর পরিচালক ওয়াং মিংসান ও সাবেক জ্যেষ্ঠ কমিউনিস্ট নেতা জু হাইলুন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে বলপূর্বক শ্রম আদায়, গণআটক ও জোর করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করাসহ ভয়াবহ এবং পরিকল্পিত নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি বলেন, নৃতাত্ত্বিক কাজাখ, উইঘুর মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকতে পারে না।

এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এ যাবতকালের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ চীনা কর্মকর্তা হলেন চেন। এই কালোতালিকাভুক্তি কোনো তামাশা নয়। কেবল প্রতীকী কিংবা খ্যাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ারও বিষয় না; বরং কোনো এক ব্যক্তির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা ও ব্যবসা করার সক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, জিনজিয়াংয়ে ১০ লাখ উইঘুরসহ অন্যান্য তুর্কিক মুসলমানকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের নামে আটক করে ভয়াবহ নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের জবরদস্তিমূলক মগজধোলাই ও হরমোন পরিবর্তন করে সংখ্যাগরিষ্ঠ হানদের সমজাতীয় করা হচ্ছে।

এ ঘটনাকে ‘শতাব্দীর কলঙ্ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন পম্পেও। উইঘুরদের প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আচরণকে এর আগে হলোকাস্টের সঙ্গে তুলনা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে এই নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় বেইজিং জিনজিয়াংয়ের কার্যক্রম থেকে হঠাৎ করেই সরে আসবে বলে মনে করছেন না মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা করা রক্ষণশীল হ্যারিটেজ ফাউন্ডেশনের নীতি বিশ্লেষক অলিভিয়া ইনোস।

তবে এর বিশাল প্রভাব রয়েছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বললেন, যুক্তরাষ্ট্র চেনকে টার্গেট করেছে এটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

‘আমার অনুমান, চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে এ ঘটনায় তরঙ্গের মতো প্রভাব পড়বে। আগামীতে কর্মকর্তারা এমন কিছুতে জড়িয়ে পড়ার আগে দুবার ভাববেন।’

 

সুত্রঃ যুগান্তর