ইয়োলো জোনে সিলেট আক্রান্তের শীর্ষে পুলিশ

সিলেটে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। সিলেট সিটির বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সিটির সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের স্ত্রীও এক সপ্তাহ ধরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসায় হোম কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী।

বুধবার সবশেষ বর্তমান মেয়রের স্ত্রীসহ আরও ৬৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সিলেট বিভাগে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬০ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেছেন, করোনা রোগীদের নিয়ে সরকার সারা দেশকে যে তিনটি- রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করতে যাচ্ছে তাতে সিলেট হয়তো ইয়োলোতেই পড়বে। দ্রুতই এ সংক্রান্ত জরিপ শুরু হবে। ২৭ মে করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়ে বাসায় আইসোলেশনে আছেন সাবেক সিসিক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরান। বুধবার বর্তমান মেয়র আরিফুল হকের স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী ও মেয়র হাউসের গেট ম্যানসহ নতুন করে আরও ৬৫ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছেন। দুই চিকিৎসকসহ আক্রান্তদের মধ্যে সিলেটে ২৬ জন ও সুনামগঞ্জে ৩৯ জন।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেছেন, হাসপাতালে ল্যাবে ১৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনা ধরা পড়ে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৯ জন করোনা শনাক্ত হন। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সিলেট জেলায় ৬২৭, সুনামগঞ্জে ২১৩, হবিগঞ্জে ১৯২ ও মৌলভীবাজারে ১২৮ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩১৪ এবং মারা গেছেন ২৩ জন।

সূত্র বলছে, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা সিসিকের মেয়র ও সিইও মোবাইল এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দাফতরিক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই সিসিকের দুজন কাউন্সিলর ও দু’জন স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এরমধ্যে একজন কাউন্সিলর প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন, অপরজন করোনাকে জয় করে বুধবার বিকালে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। স্টাফ দু’জন নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। সিলেটে সব শ্রেণি পেশার মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এর মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ বিভাগের সদস্যরা। এখন পর্যন্ত সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের প্রায় একশত সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলা পুলিশের ৬৪ ও মহানগর পুলিশের ২২ জন সদস্য রয়েছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে জেলা পুলিশের আওতাধীন বিশ্বনাথ থানার ৮৩ পুলিশ সদস্যের ৩৬ জনই আক্রান্ত হয়েছেন। জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিটি থানা পুলিশকে তিন-চারটি ইউনিটে ভাগ করে আলাদা করে রাখা হয়েছে।

এছাড়া অস্থায়ী ব্যারাকগুলোতেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ডাইনিংয়ে বসে খাবার গ্রহণের পরিবর্তে প্রত্যেককে টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার দেয়া হচ্ছে। খাবারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ভিটামিন সিযুক্ত ফল।

সব পুলিশ সদস্যকে গরম চা ও গরম পানি পান, গরম ভাপ নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কিছু ওষুধও দেয়া হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি, ব্যারাক ও অফিসে নিয়মিত জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

সুত্রঃ যুগান্তর