বৃহস্পতিবার , ৫ নভেম্বর ২০২০ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদের মালিকানা ভাবনা

Paris
নভেম্বর ৫, ২০২০ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

পুঁজিবাদের প্রধান দিক হচ্ছে সুদভিত্তিক বিনিয়োগ। অমুসলিম সমাজে এ প্রক্রিয়া বহুল প্রচলিত ও ব্যাপকভাবে বিকশিত। এ ধরনের লেনদেন প্রক্রিয়ায় দুটি জিনিসের উপস্থিতি লক্ষণীয়—

এক. ঋণের জন্য পুঁজি সরবরাহকারী বা বিনিয়োগকারী। দুই. ব্যবসা পরিচালনাকারী। যিনি পুঁজি দেন ব্যবসায় লাভ হলো না লোকসান হলো তা নিয়ে তার ভাবনার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি পুঁজির ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ পেতে থাকেন। ইসলাম এ ধরনের ব্যবসা সমর্থন করে না এবং সুদের সব কায়কারবার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম।

ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শন : ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রিবার কোনো স্থান নেই। কেননা ইসলামের বিধান মতে, রিবা সমাজের জন্য একটি বড় অভিশাপ। সুদি ব্যবস্থার কারণে অর্থ একটি শ্রেণির হাতে এসেই শুধু জমা হয়। এতে অপরিহার্যভাবে একচেটিয়া ব্যবসার সৃষ্টি হয়। সুদ স্বার্থপরতা, লোভ, অবিচার ও শোষণের জন্ম দেয়।

সম্পদ বণ্টনের ইসলামী প্রেক্ষাপট : কোরআনে সন্ন্যাসজীবনকে অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং সেই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তোমরা আল্লাহর বদান্যতা তালাশ করো। একই সঙ্গে দুনিয়াবি জীবনের ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্য পবিত্র কোরআনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

কোরআনের মতে, জীবিকার সব উপায় হলো মানুষের জীবন চলার পথের সাময়িক পাথেয় মাত্র। আর মানুষের আসল গন্তব্য তার আয়ত্তের বাইরে বর্তমান। মানুষের আসল গন্তব্যের সঙ্গে জড়িত তার চরিত্র এবং কর্মের উৎকর্ষ বিধান করা এবং তার মাধ্যমে পরজগতে আনন্দ বা সুখের ভিত রচনা করা। তাই দুনিয়ার জীবিকার সন্ধানে যাবতীয় উপায় উপকরণ ব্যবহারে মানুষকে তার আসল গন্তব্যের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আসল ঠিকানাকে সামনে রেখে মানুষকে চলতে হবে। তা হলে শুধু সে আল্লাহর বদান্যতা বা সন্ধান লাভ করবে। আর যে মানুষ তার আসল গন্তব্য ভুলে যাবে, দুনিয়ার ভ্রান্তি এসে তাকে ঘিরে ফেলবে এবং সে কষ্টের সম্মুখীন হবে। এই অবস্থা লক্ষ করেই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা দিয়ে আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো…।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)

সম্পদ ও সম্পত্তির আসল প্রকৃতি : ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদের মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ। যেকোনো জিনিসের বা সম্পদের ওপর আল্লাহর একক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত। তাঁর পক্ষ থেকে মানুষ এ সম্পদ লাভ করে ব্যবহার করার জন্য। কোরআনের ঘোষণা হচ্ছে, ‘আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন, তা থেকে তাদের দান করো।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৩৩)

কোরআনের এ নীতি অনুযায়ী মানুষ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় তার শ্রম নিয়োজিত করতে পারে। আর একমাত্র আল্লাহই মানুষের এ প্রচেষ্টাকে সফল ও উৎপাদনকে কবুল করার ক্ষমতা রাখেন। মানুষ শুধু কোনো বীজ মাটিতে পুঁতে রাখতে পারে এ উদ্দেশ্যে যে তা থেকে গাছ বা ফসল উৎপন্ন হবে। আর সেই বীজ থেকে অঙ্কুর এবং এরপর কোনো গাছ বা ফসল বের করার কাজটি মানুষের আয়ত্তে নয়। তার দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহর। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ করেনি যে আমি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি নিজ হাতে সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে চতুষ্পদ জন্তুগুলো? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৭১)

এ আয়াত থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, সম্পদ যে ধরনেরই হোক না কেন তার প্রকৃত মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। আর তিনি অনুগ্রহ করে এ সম্পদ মানুষকে দিয়েছেন তা ব্যবহার এবং তা আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী ভোগ করার জন্য। তাই আল্লাহ এ অধিকার রাখেন যে মানুষ আল্লাহর বিধান মতে তাঁরই সম্পদ ব্যবহার করেছে কি না তার জন্য জবাবদিহি নিতে। অতএব সম্পদের ওপর মানুষের অধিকার আছে শুধু ব্যবহারের। তবে সম্পদের ওপর তার অধিকার একক বা সীমাহীন নয়। সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের যে অধিকার তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ সম্পদকে আল্লাহ নির্ধারিত পথে এবং তাঁরই দেওয়া নিয়মে ব্যয় করতে হবে এবং যেখানে নিষেধ রয়েছে সেখানে আল্লাহর দেওয়া সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না।

সম্পদ ব্যবহারে আল্লাহর বিধান দুইভাবে গ্রহণ করতে হবে—

(ক) আল্লাহ তাঁর দেওয়া সম্পদ অন্যজনের কল্যাণে ব্যবহার করতে বলেছেন এবং তা মানুষকে অবশ্যই পালন করতে হবে। কারণ আল্লাহ সম্পদ দিয়ে তার কল্যাণ করেছেন, তেমনি সেও অন্যের কল্যাণ করবে।

(খ) আল্লাহ মানুষকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা ব্যবহারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন। আল্লাহ এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। কেননা সম্পদের মালিক তিনি। আর তা অন্যের ক্ষতি করলে বা দুনিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টি করলে তাতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও আল্লাহই রাখেন।

সম্পদের ব্যাপারে ওপরে যে আলোচনা করা হয়েছে তাতে ইসলামে সম্পদের ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। আর এই ধারণার সঙ্গে পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী অর্থনীতির রয়েছে আকাশ-পাতাল ফারাক। পুঁজিবাদী অর্থনীতি তাত্ত্বিকভাবে এবং প্রয়োগতভাবে জড়বাদী বা বস্তুবাদী ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই পুঁজিবাদী ধারণা মতে, সম্পদের একচ্ছত্র মালিক মানুষ। সম্পদের ওপর মানুষের অধিকার সীমাহীন। তাই সে তার সম্পদকে যেখানে ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় ও ব্যবহার করতে পারে। পবিত্র কোরআন পুঁজিবাদের ধারণা প্রচণ্ডভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। কোরআন বলেছে, ‘তারা বলল, হে শোয়ায়েব! আপনার নামাজ কি আপনাকে শিক্ষা দেয় যে আমরা ত্যাগ করি ওই সব উপাস্যকে, যাদের উপাসনা করে আসছে আমাদের বাপ-দাদারা অথবা আমাদের সম্পদে আমরা ইচ্ছামতো যা কিছু করে থাকি তা ত্যাগ করি?’ (সুরা : হুদ, আয়াত ৮৭)

এখানে শোয়ায়েব (আ.)-এর জাতির লোকেরা সম্পদকে তাদের নিজের বলে মনে করছে এবং তারা সম্পদকে তাদের ইচ্ছামাফিক খরচ করতে পারে বলে দাবি করেছে। অথচ সম্পদের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। এখানেই পুঁজিবাদের ধারণার মূলে কঠোর আঘাত হেনেছে ইসলাম। অর্থাৎ সম্পদ দেওয়ার এবং তা ব্যবহারের পথ বাতলে দেওয়ার মালিক আল্লাহ। আবার আল্লাহ সম্পদকে তাঁরই দেওয়া সম্পদ বলে ঘোষণা করে সমাজবাদীদের ‘সম্পদের’ ধারণাকেও নস্যাৎ করে দিয়েছেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - ধর্ম