ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মারধর ও হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন


নওগাঁ প্রতিনিধি:

নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বিদ্যুৎ হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাটি তুলে নিতে ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ওরফে কামরুল ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বাদী বিদ্যুৎ হোসেন। বুধবার দুপুরে নওগাঁ ফ্রেন্ডস মিডিয়া হাউজ মিলনায়তনে আয়জিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পানিয়াল গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীতি চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজীবুর রহমানের পক্ষে ভোট করেন। অন্যদিকে তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত ইউপি নির্বাচন থেকেই তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছিল। এছাড়া চেয়ারম্যানের সঙ্গে জমিজমা নিয়েও বিরোধ রয়েছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ১০ জুলাই ঈদের দিন সন্ধ্যা দিকে চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান তাঁর ভাতিজা সাজেদুর রহমানের বিদ্যুৎকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নেন।

সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, জামায়াতের কর্মী সাজেদুর, কাবিরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও বাবুল হোসেন তাঁকে লোহার রড ও বাঁশ দিয়ে মারপিট করেন। এতে তিনি গুরুত্বর আহত হন এবং তার একটি হাত ভেঙ্গে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই দিনই তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় গত ১৮ জুলাই নওগাঁ আমলী আদালত-২ (মান্দা)- এ মামলার আরজি করেন বিদ্যুৎ হোসেন। আরজিটি আমলে নিয়ে আদালত এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা নিয়ে মান্দা থানা পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় গত রোববার হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট ও গুরুত্বর জখম করার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মান্দা থানায় মামলা করেন বিদ্যুৎ হোসেন।

বিদ্যুৎ হোসেনের অভিযোগ, থানা মামলা দায়েরের তিন দিন পরেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এদিকে আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন। তা না হলে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এলাকাছাড়া করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি ইতোমধ্যে থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় দুই-একদিনের থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগকারী বিদ্যুৎ হোসেন এলাকার একজন চিহ্নিত মাদকসেবী। গত ১০ জুলাই ঈদের দিন বিদ্যুৎ হোসন সাবাইহাট বাজারে মদ খেয়ে মাতলামি করছিলেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা তাঁকে ধরে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। এ সময় কার্যালয় থেকে দৌড়ে পালানোর সময় বিদ্যুৎ দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় বিদ্যুৎ তাঁর হাতে একটু আঘাত পান। তাঁকে মারধর করা হয়নি। মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়।’

এদিকে গত সোমবার মান্দা উপজেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান ফোরাম। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজমসহ ফোরামের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চেয়ারম্যান ফোরামের অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, জামায়াতের চেয়ারম্যান মোখলেছুরকে বাঁচানোর জন্য ইউপি চেয়ারম্যানরা তাঁর বিরুদ্ধে সবাই একজোট হয়েছেন। আমাকে মাদকসেবী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমি কোনোদিন মাদক সেবন করেনি। আমার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত কোনো মামলাও নেই।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মারধরের এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগে আদালতের নির্দেশে একটি মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলার আসামিরা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তাঁদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলা তুলে নিতে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এস/আই