ইউএনও’র ওপর হামলা, পুলিশের চোখ এখন অন্যদিকে

ঘোড়াঘাট ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আসাদুল ইসলামকে এ ঘটনার প্রধান আসামি ও হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল র‌্যাব। কিন্তু পুলিশ এখন বলছে এই ঘটনার মূল নায়ক রবিউল ইসলাম।

গত ৪ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১৩ রংপুর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, আসাদুল ইসলাম দাবি করেছে, চুরির উদ্দেশ্যেই ইউএনও’র বাসায় প্রবেশ করে ইউএনও’র ওপর হামলা চালায়। একথা আসাদুল ইসলাম র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে।

র‌্যাবের সেই দেয়া তথ্য অনুয়ায়ীই আসাদুল ইসলামকে এই মামলার প্রধান আসামি করা হয় এবং তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। কিন্তু এর ৮ দিন পর পুলিশ বলছে অন্যকথা। পুলিশ জানায়, আসাদুল ইসলাম নয়, এই হামলার মূল নায়ক রবিউল ইসলাম।

দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং শনিবার বিকালে এ বিষয়ে রংপুর ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, ঘোড়াঘাটে ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সম্প্রতি রবিউল ইসলাম নামে একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে তার বক্তব্য প্রদান করেছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা বেশ কিছু আলামতও উদ্ধার করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে, সেটির সাথে আমরা মিলিয়ে দেখছি। আজকে (শনিবার) আমরা তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করবো এবং রিমান্ড চাইবো। রিমান্ডে নিয়ে এসে আমরা তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করবো। যেহেতু বিষয়টি এখনও চলমান রয়েছে, আমি মনে করি যে, এই পর্যন্তই আমার বক্তব্য। পরবর্তীতে তদন্ত সমাপ্ত করলে, আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রংপুর ডিআইজি বলেন, যেহেতু বিষয়টি তদন্ত চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে এর চেয়ে এখন বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না, তদন্ত শেষ হলেই আমরা সবকিছু জানাবো। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে হাতুরী উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে রবিউল কী কারণে হামলা করেছিলো-সে বিষয়ে কিছু বলেননি ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য।

এসময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, র‌্যাব বলেছিল আসাদুল ইসলামই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, তাহলে এখন বিষয়টা কী দাঁড়ালো?- এর জবাবে ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু র‌্যাবের যে কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি একজন অত্যন্ত চৌকষ কর্মকর্তা এবং তাকে আমি ব্যাক্তিগতভাবেই চিনি। এটি আসাদুল কেনো বলেছে, হতে পারে তাকে হয়তো মিসগাইড করেছে বা অন্যকিছু থাকতে পারে। আমরা সব বিষয়গুলো এখন দেখছি তদন্ত করে।

তবে প্রেসব্রিফিংয়ে বিভিন্ন আলমত উদ্ধারের কথা বলা হলেও সাংবাদিকদের সামনে কোনো আলামত উপস্থাপন করা হয়নি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম জাফরসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

উচ্ছ্বসিত ও হাস্যোজ্জ্বল আসাদুল: সাত দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার বিকালে যখন মামলার প্রধান আসামি ঘোড়াঘাটের বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয় তখন তাকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। এসময় তাকে বেশ উচ্ছ্বসিত ও হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।

এসময় উপস্থিত অনেকেই ধারণা করেন, সন্দেহের তীর তার দিক থেকে অন্যদিকে ধাবিত হওয়ায় তাকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখাচ্ছে। অনেকেই বলেন, ইতিমধ্যেই সে জেনে ফেলেছে সন্দেহের তীর এখন তার দিকে নেই এবং তিনি এই মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন। যদিও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর সে স্বীকার করেছিল সে-ই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রংপুরে র‌্যাব-১৩ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, আসাদুল ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। সে অনুযায়ী তাকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর ডিবি পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডও নেয়। কিন্তু এর ৮ দিন পর পুলিশ আসাদুল ইসলামকে বাদ দিয়ে ঘটনার মুল নায়ক হিসেবে রবিউল ইসলামকে উপস্থাপন করে।

প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে নির্মমভাবে হাতুরী দিয়ে পিটিয়ে জখম করে দুর্বত্তরা। বর্তমানে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ঢাকায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে এবং তার পিতা ওমর আলী শেখ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড়ভাই শেখ ফরিদ উদ্দীন বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ইতিমধ্যেই ঘোড়াঘাট থানা থেকে স্থানান্তর করে দিনাজপুর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন দিনাজপুর ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম জাফর। এই মামলায় বর্তমানে ৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরা হলো-আসাদুল ইসলাম, নবীরুল ইসলাম, সান্টু কুমার দাস, রবিউল ইসলাম ও নাদিম হোসেন পলাশ। রবিউল ইসলাম শনিবার থেকে ৬ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। বাকি ৪ জন বর্তমানে রয়েছেন দিনাজপুর জেলা কারাগারে।  সূত্র: যুগান্তর