বগুড়ায় আ.লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে ৪ গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

বগুড়ার গাবতলীতে বিএনপির সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকি দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

রোববার দুপুরের এ ঘটনায় ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে।

বিএনপি দাবি করেছে, তাদের চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহতদের বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ হামলার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগে একে অপরকে দায়ী করছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কেউ আহত হওয়ার খবর তাদের কাছে নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাবার বুলেট নিক্ষেপ করায় কেউ গুলিবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বগুড়ার গাবতলীতে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সুরাইয়া জেরিন রনি প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেন। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি শনিবার রাতে গাবতলী থানায় সুরাইয়া জেরিন রনির বিরুদ্ধে এজাহার করেন।

তিনি জানান, এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বেলা ১২টার দিকে গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে গাবতলী থানার সামনে এলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

এদিকে এ সংঘর্ষের জের ধরে গাবতলী উপজেলা সদরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেন। প্রতিবাদে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা তিনমাথা মোড়ের দিকে পৌঁছলে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশ বাধা দেয়। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে।

গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা আবদুর রাজ্জাক মিলু বলেন, বিএনপির সম্মেলনে মহিলা দল নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনি প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেন। তার ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের জন্য রোববার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। তাদের সে শান্তিপূর্ণ মিছিল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টনের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীর হামলা করে। এতে ছাত্রলীগ নেতা সুজন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রয়েলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, তাদের অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হলেন- গাবতলী পৌর যুবদলের সাবেক আহবায়ক হারুনুর রশিদ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এমআর হাসান, দুর্গাহাটা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আশিক ইসলাম এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মহিলা দল নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনির বক্তব্য তার ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট করেছে। প্রতিবাদে মিছিল বের করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জ করেছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে শটগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মামলা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি শনিবার রাতে গাবতলী থানায় মহিলা দল নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনির বিরুদ্ধে এজাহার দিয়েছেন। তবে গাবতলী থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, ওই ঘটনায় জিডি হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর