শফিক আজম:
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক। যার নামে প্রাণের এ শহরকে ডাকা হয় সিল্কসিটি নামে। তার কদর সারা বছরজুড়েই। আর উৎসব প্রার্বনে তো এর কোনো জুড়ি নেই। ফলে ঈদ এলে এর চাহিদা বাড়ে ব্যাপক। ঈদকে কেন্দ্র করে ছেলে বুড়ো অথবা শিশুদের পোশাকের জন্য সিল্কের জুড়ি নেই।
রাজশাহীর এই ঐতিহ্যবাহী সিল্কের পোশাকের শো রুমগুলোও জমজমাট কেনাকাটায় মেতে উঠে। আবার দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে রফতানী করা হয় এই সিল্কে পোশাক। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় অব্যাহত রাখতে রাজশাহীর সিল্কের শো-রুম এবং কারখানাগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
- আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে পোশাক কেনাকাটার দিকে ক্রমেই ঝুঁকতে শুরু করেছেন নগরবাসী। বলতে গেলে ব্যস্ততা শুরু। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে দোকানীরাও ব্যস্ত নতুন পোশাকগুলোকে সাজানো নিয়ে। কিন্তু তার থেকেও অধিকতর ব্যস্ত সময় পার করছেন সিল্ক কারখানার শ্রমিকেরা। অতিরিক্ত অর্ডার অনুযায়ী পণ্য তৈরী করতে গিয়ে কারখানাতে অতিরিক্ত সময় পার করছেন তারা। ঈদে সকল অর্ডারকৃত পণ্য যথা সময়ে সরবরাহ করতে শ্রমিকদের যেন অবসর নেই। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত সপুরা সিল্ক মিল এখন অনেকটাই সরগরম। সুতা বুননের চাকার টাস টাস শব্দে যেন আশে-পাশের চারিদিক কাঁপছে। এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় কান বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা হয়ে আসছে পথিকদের। কারখানায় না গেলে বোঝার উপায় নেই নিজের কাজে কতটা মনোযোগী শ্রমিকরা। কারণ ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত অর্ডার মোতাবেক কাজ করছেন তারা। বিশেষ করে ব্যস্ততা দেখা যায় সুতার তৈরী ও বুননকারী শ্রমিকদের। কারণ পণ্য তৈরীর জন্য মূল কাজটিই তাদের।
সপুরা সিল্কের কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজান উপলক্ষে কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের। করতে হচ্ছে অতিরিক্ত এক ঘন্টার কাজ। ফলে পূর্বে যেখানে কাজের সময় সীমা ছিল সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮টা সেখানে অতিরিক্ত এক ঘন্টা বাড়িয়ে করা হয়েছে রাত ৯টা।বাতিল করা হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ক্রেতাদের কাছে পছন্দের পোশাকটি পৌছে দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
- কারখানার শ্রমিক শাহানাজ সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘ঈদ আসলে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়। দুই ঈদের এক মাস আমাদের পরিশ্রম বেশি হয়। এবারে রোজার আগে থেকেই অনেক চাপ।’
বুনন শ্রমিক ফিরোজ হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, রমজান মাস আসলেই কাজের চাপটা বৃদ্ধি পায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। রমজানের শুরু থেকে কাজের চাপ বেড়েছে। আর শ্রমটাও বেশি হচ্ছে।
আরেক শ্রমিক উজ্জল হোসেন বলেন, সারা বছর যে কাজ হয় এখন তার চেয়ে বেশি কাজ করতে হচ্ছে। রাজশাহীর বাইরের হোল সেলারদের অর্ডার বেশি পরিমানে আসছে। আমাদেরকে আগের চেয়ে বেশি কাজ করতে হচ্ছে।
কাজ বেড়েছে ডিজাইন শেকশনেও। সূতা বুননের পর তা থেকে মোম দিয়ে নানা ডিজাইন করে কাপড় রং করতে দিতে হয়। এর পর রং করা হলে আবারো তা আসে ডিজাইনের কাজে। এরপর সেখান থেকে কাপড় শুকিয়ে তুলে আনা হয় শোরুমে। তাই দিনের প্রথম ভাগ থেকেই বেশি করে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন তারা।
- ডিজাইনার মীরা দাশ সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমরা তিনজন মিলে ডিজাইনের কাজটি করে থাকি। কাপড়ে প্রথমে মোমের ডিজাইন করে তাতে রং করার জন্য পাঠাই। পরে কাপড় শুকানোর পরে ওই কাপড়ে আবারো ডিজাইন করি।বিভিন্ন কোম্পানীর যখন ডিজাইন নির্ধারিত করে দেয় তখন সে অনুযায়ীই আমাদের কাজ করতে হয়। ঈদের সময় এই ধরনের কাজগুলোর অর্ডার থাকে বেশি। তাই এ সময় কাজের চাপটাও থাকে বেশি।
রং মাষ্টার জুয়েল রানা সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমাদের কাজের জন্য অতিরিক্ত কোন সময় নেই। তবে আমাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করি। কাপড়ে রং বসানোর কাজটা অত্যন্ত দক্ষতা সাথে দেখতে হয় বলে আমাদের একটু বেশি সময় লেগে যায়। সে হিসেবে বলা যায় এখন চাপ বেশি।
শুধু সুতার বুননই না সুতা তৈরী, নলি তৈরী, সূতার ববিন তৈরী থেকে ডিজাইন ও রং তৈরী সব ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে দ্বিগুন। আর তাইতো নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সুতার কাজে মেশিন নিয়ে রীতিমতো ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।
- সপুরা সিল্কের মালিক সদর আলীর ছেলে সাজ্জাদ আলী সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘গুনগত মাণের দিক থেকে আমরা কখনোই আপোষ করি না। আমাদের প্রতিটি পণ্য বিশেষ ভাবে তৈরী করা হয়। আর এই ধারাটি অব্যাহত রাখার কারণে দেশে এবং বিদেশে রাজশাহীর এই সপুরা সিল্কের চাহিদা ব্যাপক।’
তিনি বলেন, ‘রমজান আসলে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়।বিভিন্ন জায়গার কোম্পানী কিংবা বাইরের দোকানের অর্ডার মোতাবেক পোশাক আমাদের সরবরাহ করতে হয়। এবারে রমজানে মসলিন কাপড়ে কাজ, এনডির কাজ, হাতের এম্ব্রটারী,ধুপিয়ান কাপড়ের কাজগুলো বেশি চলছে। আর গরমে ক্রেতাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে পোশাকের মান উন্নয়ন করা হয়েছে।’
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে যেমন বেড়েছে কাজের চাপ, গতি বেড়েছে সিল্ক কারখানার শ্রমিকদের। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী এ সিল্ককে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছে দিতে ব্যস্ত কারখানাগুলো। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতি তাদের সম্পন্ন। রমজানের আগে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত পোশাক আর রমজানে তৈরীকৃত পোশাক ক্রেতাদের মাঝে সরবরাহ করতে নিরলস কাজ করছেন বিভিন্ন সিল্ক ইন্ডাষ্ট্রীজ।
স/আর