সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কারখানাগুলো ঘিরে কী ঘটছে?

Paris
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪ ১০:০২ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

নানা দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০দিন ধরে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে, যাতে এর মধ্যেই কারখানায় ভাঙচুর, পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সোমবারও আশুলিয়ার ৭৯টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।

শ্রমিকদের অব্যাহত এসব বিক্ষোভের ঘটনায় শিল্পখাতে প্রভাব পড়ার শঙ্কায় আছেন মালিকপক্ষ। অন্যদিকে শ্রমিকদের ‘যৌক্তিক’ দাবিকে আরও সংবেদনশীলতার সঙ্গে সামাল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলছেন শ্রমিক নেতারা।

তবে পরিস্থিতি ঘোলাটে হবার পেছনে ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তন’ এবং ‘তৃতীয় পক্ষের’ ইন্ধনকেও কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

যেভাবে বিক্ষোভের শুরু

রোববার রাতে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।

এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর র‍্যাবের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

তবে শ্রমিকদের এই বিক্ষোভের শুরু প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন আগে। সে সময় বকেয়া বেতনের দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে একটি কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে।

সপ্তাহখানেক আগে তা আরও বড় আকারে ছড়িয়ে যায়।

শ্রমিক নেতাদের দাবি, শ্রমিকদের সাধারণ কিছু দাবিদাওয়ার প্রতি মালিক পক্ষের ‘আন্তরিকতার ঘাটতির’ কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ গামের্ন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে অনেক শ্রমিকও মারা গেছে। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও কারখানায় শ্রমিকরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন, তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

‘শ্রমিকদের দাবিগুলো মালিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে নিলে এই সমস্যা হতো না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শ্রমিকদের মূল দাবি কী?

প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির কার্যত কোনো পরিবর্তন আসেনি।

মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা বলছেন, আগের যেকোনো শ্রমিক বিক্ষোভ বা অসন্তোষের ঘটনাগুলোতে যেমন নির্দিষ্ট দাবি দাওয়া থাকতো, এবার তেমনটা নেই।

বরং সামষ্টিক কিছুর পরিবর্তে ‘অযৌক্তিক’ দাবি দাওয়ার দিকে ঝুঁকেই একটি পক্ষ অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

এ নিয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল। রোববার ৪৪টি ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে হয়েছে বলে তিনি জানান।

“বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া বিভিন্ন রকম। ফলে একেক ফ্যাক্টরিতে একেক রকম চাহিদা। টিফিনের টাকা কিংবা হাজিরা বোনাস বাড়ানো অথবা ম্যানেজারকে বের করে দিতে হবে- এমন সব দাবি করছে তারা। একটি দাবি মেনে নিলে তারা আরেকটি দাবিতে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

এছাড়াও পোশাক খাতে নারী শ্রমিকদের আধিক্য কমিয়ে পুরুষ শ্রমিকদের বেশি সুযোগ করে দেয়ার দাবিও তুলেছেন অনেকে।

তবে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন মি. মিন্টু।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা যেসব দাবি করছেন শ্রম আইনেই তার বেশিরভাগ বিষয়গুলো বলা আছে।

এর বাইরে টিফিন বিল বাড়ানো কিংবা হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো যদি মালিক ও শ্রমিক সমন্বয় করে তাহলে আর সমস্যা থাকে না।

বিশেষ করে আশুলিয়ার মাত্র দুই শতাংশ কারখানায় এই সমস্যাগুলো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইয়ে প্রায় এগারো-বারোশ গার্মেন্টস আছে। কিন্তু এফেক্টেড কারখানা সর্বোচ্চ হবে ৫০টা। যেখানে সমস্যা হচ্ছে সেখানে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি মানার ব্যাপারে আন্তরিকতার বড় অভাব। যার কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।”

যেভাবে একের পর এক কারখানা বন্ধ

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে শ্রমিকরা দাবিয়াদাওয়া আদায়ে সড়কে নেমে এলেও এখন তারা কারখানাতেই আছেন।

তবে কারখানায় উপস্থিত থেকেও তারা কাজ বন্ধ করে বসে থাকছে। ফলে কাজ না করায় দুপুরের পর তাদের ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন মালিকরা।

সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩টি কারখানার শ্রমিক বের হয়ে গেছে বলে জানান মি. রুবেল।

এছাড়াও আট-নয়টি কারখানায় বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি।

এমন অবস্থায় শ্রমিকরা নিজ কারখানা থেকে বেরিয়ে সচল কারখানাগুলোতেও হামলা করার ভয়ে বাকি কারখানাগুলোও বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ।

পোশাক শিল্প ছাড়াও এগুলোর মধ্যে আছে জুতা ও ওষুধ কারখানাও।

তবে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে সোমবারও কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা।

ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়ন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র‍্যাব, পুলিশের রায়ট কার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি দেওয়া নিয়ে হাতেগোনা কয়েকটি শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

‘তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে’

কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভের পেছনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।

এনিয়ে শ্রমিক নেতা মি. মিন্টু বলেন, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে অনেক শ্রমিকও মারা গেছে।

কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও নিয়োগ বৈষম্য, বেতন বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোতে কারখানায় শ্রমিকরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন, তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

ফলে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা কারখানায় জানালে এলাকার জুট ব্যবসায়ীরা একে পুঁজি করেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “ঝুট ব্যবসার হাত বদল হয়েছে। আগে আওয়ামী লীগপন্থীরা এই ব্যবসা করতো, এখন বিএনপিপন্থীরা তৎপর।”

সবমিলিয়ে দুই দলের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। এমনকি বিএনপির নিজেদের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ফলে এ নিয়ে অসন্তোষ আছে।

এছাড়াও অসন্তোষ আছে কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যেও।

আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অনেকেই শ্রমিকদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেছে বলে জানান মি. মিন্টু।

এখন তাদেরও চাকরি থেকে ছাটাই চাচ্ছেন শ্রমিকরা।

“সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইয়ে প্রায় এগারো-বারোশ গার্মেন্টস আছে। কিন্তু এফেক্টেড কারখানা সর্বোচ্চ হবে ৫০টা। যেখানে সমস্যা হচ্ছে সেখানে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি মানার ব্যাপারে আন্তরিকতার বড় অভাব। যার কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এই সুযোগ নিচ্ছে জুট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বাইরের ইন্ধনদাতারা,” বলেন তিনি।

জুট ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই বিক্ষোভ উস্কে দেয়ার ক্ষেত্রে ইন্ধনদাতার কাজ করছে বলে মনে করছেন মি. রুবেলও।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে জুট ব্যবসার মালিকানা নিয়ে ঝামেলা নজরে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শুরু থেকেই আমাদের মনে হয়েছে এতে অবশ্যই তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন ছিল। এত বড় সহিংসতা বা ঝামেলা কোনো একটি ফ্যাক্টরি বা ওয়ার্কার্স করতে পারে না।”

“দেশি বলেন আর বিদেশি বলেন কোনো পক্ষের এখানে ইন্ধন ছিল, আর এটা রাজনৈতিক ব্যাপার ছিল,” বলেন তিনি।

সমাধানের উপায় কী?

মালিকপক্ষের দাবি, বিশৃঙ্খলা করলেও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর ক্ষেত্রে তারা ছিলেন অনেকটাই নির্বিকার।

পূর্ববর্তী সরকার পতন আন্দোলন ঘিরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। বাহিনীগুলো যখন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আছে তার মধ্যে এমন ঘটনা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন কারাখানা মালিকরা।

বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “আগের চেইন অব কমান্ড এখন নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এবারের বিশৃঙ্খলা সেভাবে থামাতে পারেনি। ফলে বিষয়টা ছড়িয়ে গেছে।”

এছাড়াও আগে এই ধরনের কোনো সমস্যা হলে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা হতো।

কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই মানুষগুলোও বদলেছে। ফলে ‘শ্রমিক নেতারা বুঝে উঠতে পারছে না’ কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

তবে বল প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রমিক বিক্ষোভের বিষয়টি সমাধানের সঙ্গে একমত নন শিল্প পুলিশ–১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম।

তিনি বলেন, “ওনারা যদি ভাবে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আমরা ঠিক করবো, কিংবা তাদের কথা যেন শোনে তাই আমরা লাঠিপেটা করে মালিকের ইচ্ছা অনুসারে চলার জন্য তাদের বাধ্য করবো, এটা গণতান্ত্রিক অধিকার না। এটা কোনো সভ্য সমাজের নিয়ম হতে পারে না।”

“এখন আর রাস্তায় কিছু হচ্ছে না, যা হচ্ছে কারখানার ভেতরে। সুতরাং এটার সমাধান তাদেরই করতে হবে,” বলছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সব মিলিয়ে ভাঙচুর ও গণ্ডগোল বন্ধ হওয়ায় আপাতভাবে পরিস্থিতির যেমন উন্নতি হয়েছে, তা পুরোপুরিভাবে কার্যকর করে সহিংসতা বন্ধের জন্য শ্রমিক-মালিক পক্ষের সক্রিয় যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার জরুরি বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - জাতীয়