বৃহস্পতিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি তাণ্ডব

Paris
নভেম্বর ১৬, ২০২৩ ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

‘যুদ্ধাপরাধ’, ‘নৈতিক অপরাধ’, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ হুমকি-ধমকি কোনো কিছুই পরোয়া করেনি ইসরায়েল। শেষ পর্যন্ত গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। জরুরি বিভাগ, সার্জারি বিভাগসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ তছনছ করেছেন তারা; ভেতরে থাকা রোগী, সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য দিলেও আল-শিফার প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী কয়েক দিন থেকেই আল-শিফা হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ইসরায়েলের ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে দফায় দফায় হাসপাতালটিতে বিমান হামলাও হয়েছে। কিন্তু গতকালই প্রথম স্থল সেনারা হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেন।

হাসপাতালটির জেনারেল ডিরেক্টর ডা. মুনির আল-বুর্শ জানিয়েছেন, সেনারা বেসমেন্ট ও জরুরি বিভাগ এবং সার্জাবি বিভাগের সরঞ্জাম ধ্বংস করেছেন। মৃত্যুর মুখে থাকা রোগীসহ নারী ও শিশুরা আতঙ্কে রয়েছেন। আল-শিফার আরেক চিকিৎসক আহমেদ মোখল্লালতির সঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ক্ষোভ-হতাশা আর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আজ কোথায় রেডক্রস, ব্রিটিশ আর মার্কিন সরকার কোথায়! সবাই কি অপেক্ষা করছে আমরা এখানে কখন মারা যাব; তার পর তারা বলবেন ‘আমরা ভালো মানুষ ছিলাম।

এই চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, ইসরায়েল হাসপাতালটি খালি করতে বলছিল, কিন্তু এখান থেকে কাউকে বাইরে যেতে দেখলেই ইসরায়েলি সেনারা গুলি করেন; এতে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আল-শিফার আরেক চিকিৎসক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, গোটা হাসপাতালের কয়েকটি ভবনে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান নিয়েছেন। তারা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন না; কিন্তু ডায়ালাইসিস ভবন দখল করে রেখেছেন। আমরা রোগীদের জন্য ফার্মেসিতে যেতে পারি না, তারা গুলি করেন।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গ্রেব্রিয়াসুস বলেছেন, আল-শিফায় সশস্ত্র সেনাদের অভিযান রোগীদের সঙ্গে মারাত্মক উদ্বেগের। তিনি আরও জানান, তারা আল-শিফার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

অভিযানের সময় সেখানে থাকা একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালের রুমে রুমে যাচ্ছেন এবং একে একে প্রশ্ন করছেন। সশস্ত্র সেনাদের কাছ থেকে রোগী এবং চিকিৎসক কেউ বাদ যাননি। হাসপাতালটিতে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার মানুষকে তল্লাশি করা হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হাসপাতালটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আল-শিফার ভেতরে থাকা সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরার জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে ২০০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছেন ইসরায়েলি সেনারা।

ইসরায়েল বলছে, গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস আল-শিফাকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। একই ভাষ্য যুক্তরাষ্ট্রেরও। কিন্তু হামাস বলছে, গণহত্যা বৈধ করতে এসব মিথ্যাচার করছে ইসরায়েল। অভিযানের আগে ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের আস্তানা, অস্ত্র এবং জিম্মিদের অবস্থান জানতে তারা ‘নির্দিষ্ট লক্ষ্যে’ অভিযান শুরু করেছে।

জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) বিশ্বের ত্রাণ সংস্থগুলো বারবার বলে আসছে ‘হাসপাতালকে যেন যুদ্ধক্ষেত্র বানানো না হয়’। কিন্তু চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল এসব বিবৃতি বারবারই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। অন্যদিকে হামাস বলছে, আল-শিফা হাসপাতালে অভিযানের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গতকাল এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনির প্রতিরক্ষা গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে হামলার জন্য আমরা দখলদার (ইসরায়েল) এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সম্পূর্ণ দায়ী করি। কেননা, হাসপাতালটিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন। এতে ইসরায়েল সেখানে হামলার গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আল-শিফায় প্রায় ৭০০ রোগী রয়েছে; তাদের সেবায় রয়েছে ৪০০ কর্মী। আল-শিফাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৩ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামাস-ইসরায়েল চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতে গাজার কোনো হাসপাতালই ইসরায়েলি হামলার টার্গেট থেকে বাদ পড়েনি। দখলদার বাহিনীর নির্বিচার হামলায় উত্তর গাজার সব হাসপাতালই বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানির অভাবে আল-শিফার বহু কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল ইসরায়েল জ্বালানি তেল সরবরাহের কথা বলেছিল কিন্তু সেগুলো হাসপাতালের জন্য নয়, সেগুলো জাতিসংঘের গাড়ি সচল রাখার জন্য।

উল্লেখ্য, গাজায় চলমান আগ্রাসনে ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে।

 

 

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক