আ’লীগের তোপে ভোটকেন্দ্রে টিকতে পারেননি বিএনপি এজেন্টরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মীদের তোপের মুখে কেন্দ্রে টিকতে পারেননি বিএনপির পোলিং এজেন্টরা। এ দুই সিটির কোনো কোনো কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের এজেন্টরা ঢুকতে পারেননি। আবার কেউ ঢুকলেও তোপের মুখে বেরিয়ে এসেছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

ঢাকার সিটি নির্বাচন এতটুকু সুষ্ঠু হয়নি দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনে ইভিএমে ভোট শুরু হয়। সরেজমিন ঢাকা উত্তরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ধানের শীষের দুই একজন পোলিং এজেন্ট থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মতিন বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টরা উপস্থিত হলেও তাদের কেন্দ্রে ঢোকার আগেই মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী তার তিনটি ভোটের একটি দিতে পারলেও বাকি দুটি ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এজেন্টদের তোপের মুখে বের হয়ে আসে।

মতিন আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী বহিরাগত লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়ে আমার অন্তত ৫০ জনকে পিটিয়ে আহত করে। এদের মধ্যে লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে রাসেল নামে একজনকে গুরুতর আহত করে। এ ছাড়া ৫টি কেন্দ্রের একটিতেও আমার পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি। এমন ভোট প্রহসনের।

এ দিকে সকাল ১০টার দিকে লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, ২টি বুথে বিএনপির এজেন্ট থাকলেও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কোনো পোলিং এজেন্ট নেই।

লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা উত্তর যুবদল নেতা আসিফ ভূঁইয়া (শামীম) বলেন, ভোট শুরুর আগে আমাদের লোকজনদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়ার ঘটানা ঘটেছে।

বেলা ১১টার দিকে লালমাটিয়া কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের পরিচালনা কমিটির সদস্য বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এ সময় তিনি যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম। তাছাড়া কক্ষ খুঁজে পাওয়া ডিফিকাল্ট। আমি নিজেও সাত মিনিট ধরে কক্ষ খুঁজেছি।

বিএনপির এজেন্ট উপস্থিত না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লালমাটিয়া কেন্দ্রে ২২টি বুথের মধ্যে মাত্র দুটি বুথে আমাদের ধানের শীষের এজেন্ট খুঁজে পেয়েছি। বাকিরা এখনও আসেনি। কী কারণে আসেনি সেটি আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি। যদি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে সে ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যা হয়েছে এখনও তা-ই হচ্ছে। পোলিং এজেন্টদের পথে পথে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে।

বেলা ১১টার দিকে লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির পোলিং এজেন্ট যারা এসেছে তাদের কার্ড দেয়া হয়েছে। তবে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে ৩২ নম্বর আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। এ দিকে ৩১ নাম্বারে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীক ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। মোহাম্মদপুর জামিয়া ইসলামিয়া বায়তুল ফালাহ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ডেইজি সারওয়ার ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সফিকুল ইসলাম সেন্টুর সমর্থদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থী সফিকুল ইসলাম সেন্টু এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া উত্তরের ৩১ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এনেক্স ভবন কেন্দ্র থেকে বিএনপি–সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ৷ ক্যাম্পাসের চারটি কেন্দ্র থেকেই বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, শনিবার বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ এলাকায় অবস্থিত এনেক্স ভবনের ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা৷ এর আগে সকালেই ক্যাম্পাসের অন্য তিনটি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী খাজা হাবিবের পোলিং এজেন্টদের বিতাড়িত করা হয়েছে৷

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, সব কেন্দ্র থেকে তাদের (বিএনপি) এজেন্টদের বের করে দিয়ে জোর করে আওয়ামী লীগের লোকেরা ভোট দিচ্ছেন। এ দিন দুপুরে তিনি এমন অভিযোগ করেন।