আরডিএ’র প্লটের টাকায় তিন দফায় কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর: বুঝে পাচ্ছেন না মালিকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক: টাকা পরিশোধের এক বছরেও প্লট বুঝে পাচ্ছেন না রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বারনই প্রকল্পের মালিকরা। অথচ সেই টাকায় কর্মকর্তারা তিন দফায় করেছেন বিদেশ সফর। ব্যয় করেছেন প্রায় তিন কোটি টাকা। কিন্তু কবে নাগাদ প্লট বুঝে দেওয়া হবে, আর কবে নাগাদ বাড়ির কাজ শুরু করতে পারবেন প্লট মালিকরা সেটি নিয়েও রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তা। এ নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন প্লট মালিকরা।
অন্যদিকে এখনো বেশ কয়েকটি প্লট বরাদ্দই দেওয়া সম্পন্ন হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ফাঁকা ওই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না বলেও দাবি করেছে একাধিক সূত্র।

আরিডএ সূত্র মতে, রাজশাহী নগরীর আবাসন সঙ্কট নিরসনের জন্য আরডিএ’র আওতায় নগরীর বড় বনগ্রাম এলাকায় বারনই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মেয়াদ ধরা হয় ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০১২ সালে। কিন্তু পরবর্তিতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়। শেষে ১৮৯টি প্লট করে ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পের মাটি ভরাট থেকে আনুসঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর গত বছরের ৩১ মে মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ পাওয়া প্লট মালিকদের নিকট থেকে প্লটের মূল্য বুঝে নেওয়া হয়।

অন্যদিকে এই প্রকল্পের টাকা দিয়ে আরডিএর চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা তিন দফায় ৪৫ দিনের জন্য বিদেশ সফর সেরে এসেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে প্রতিটি সফরে খরচ করেছেন কোটি টাকার উপরে। সেই হিসেবে শুধু বিদেশ সফরেই ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। প্লট মালিকদের নিকট থেকে আদায়কৃত অর্থ সেই খাতে ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এখনো প্লট বুঝে পাচ্ছেন না মালিকরা।
আরডিএ সূত্র মতে, ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকসহ সবমিলিয়ে ১৭০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় আরডিএর মাধ্যমে। আর ১৯টি প্লট রাখা হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। তবে এখনো কয়েকটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া সম্পন্ন হয়নি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না পাওয়ায়।

প্লট বুঝে না পাওয়া একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক কষ্টে গত বছরের মে মাসের মধেই টাকা পরিশোধ করেছি প্লটের। কিন্তু এখনো কি কারণে প্লট বুঝে দেওয়া হচ্চে না তা বোধগম্য নয়। এক বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্লট বুঝে দেওয়ার কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। কবে নাগাদ বুঝে পাবো আর কবে নাগাদ বাড়ির কাজ শুরু করতে পারব তা ভেবেই দিশেহারা হয়ে পড়ছি। আদৌ জীবদ্দশায় ওই প্লটের বাড়িতে থাকার সুযোগ হবে কিনা সেটি নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।’

আরেক ব্যক্তি বলেন, প্লটের টাকা নিয়ে বিদেশ ঘুরে এসেছেন কর্মকর্তারা। অথচ আমরা এখনো প্লট বুঝে পাচ্ছি না। টাকা পরিশোধ হলেও কেন প্লট বুঝে দেওয়া হচ্ছে না এর উত্তরও কেউ দিতে পারছে না।’

জানতে চাইলে এ প্রকল্পের পরিচালক শেখ কামরুজ্জামান বলেন, আমরা প্রযেক্টের কাজ শেষ করেছি ২০১৮ সালের জুনে। এরপর আমরা স্ট্যাট শাখায় সেটি বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সেটি প্লট মালিকদের কেনে বুঝে দেওয়া হচ্ছে না তা ভূ-সম্পত্তি শাখা বলতে পারবে।
জানতে চাইলে আরডিএ’র ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। তাই প্লটগুলো বুঝে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা দ্রুত সেটি করে ফেলবো।’

স/জে