আরডিএ’র এনওসি যেনো সোনার হরিণ, ভোগান্তিতে সেবা গ্রহিতারা


নিজস্ব প্রতিবেদক :
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। আরডিএ’র মূলত রাজশাহী সিটি করপোরেশসহ কয়েকটি দপ্তর নিয়ে নগর পকিল্পনা করে। নগর পরিকল্পনার মুল চাবিকাটি বলা হয় আরডিএকে। কিন্তু এই আরডিএ’র সেবার মান নিয়ে বরারবই প্রশ্ন দেখা দেয়। নগরায়নের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম বা আইন তৈরি হলেও এর বাস্তবতা দেখা যায় না।

বিশেষ করে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা ও অথরাইজড শাখা কাজ করলেও এ দুই শাখায় ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে নগর পরিকল্পনা শাখায় এনওসি (নন অবজেকশন সাটির্ফিকেট) যেনো সোনার হরিণ। যা সহজে সবার ভাগ্যে জোটে না। আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা অথরাইজড শাখার সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন প্রশ্ন উঠলেও দৃশ্যমান সমাধানের পথ নেই।

জানা গেছে, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়। এজন্য প্রথমেই যেতে হয় আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখায়। এই শাখা থেকে প্রথমে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী এনওসি নিতে হয়। এনওসি পাওয়া যায় দুই ভাবে। সাধারণ ও জরুরীভাবে। সাধারণ ভাবে এনওসি নিতে গেলে গ্রাহককে ৩০দিন অপেক্ষা করতে হয়, আর জরুরীভাবে নিতে গেলে ১৫দিন। সাধারণ ও জরুরী সেবার জন্য গ্রাহককে দিতে হয় আলাদা আলাদা ফ্রি।

কিন্তু বাস্তবে জরুরী সেবা বা সাধারণ সেবার কোনো পর্থক্য দেখা যায় না। সাধারণ সেবাতেও একজন গ্রাহককে এনওসি পেতে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়, জরুরী সেবাতেও অবস্থা একই। তবে দুটি সেবার পরও দেখা যায় বিশেষ সেবায় দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে এনওসি পাওয়া যায়। গ্রাহকরা বলছেন, একটি এনওসি নিতে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করার পরও দীর্ঘ সময় লাগে এনওসি পেতে।

আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখায় কাজ করেন ১০ জন কর্মচারি। এরমধ্যে শাখা প্রধান নগর পরিকল্পক আজেমরি আশরাফী। এছাড়াও এ শাখায় রয়েছে সহকারী নগর পরিকল্পক রাহেনুল ইসলাম রনি, নকশা কারক আয়শা আক্তার (শিউলি) ও আয়শা আক্তার (রিপা), ডেসপাস (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) পদে মতিন হোসেন, সার্ভেয়ার পদে আব্দুল কাদের, অফিস সহয়ক পদে আকলিমা খাতুন, কমপিউটারে রয়েছেন জনি হোসেন, অফিস সহায়ক আল্পনা রানী ও রিয়াজ উদ্দিন। এই দশজন কর্মচারি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করেন। মজার বিষয় অফিস সহায়ক বাদে কর্মচারিদের মধ্যে একজন অফিসে উপস্থিত না থাকলে শাখার সব কাজ বন্ধ থাকে। তারপর দেখা যায়, প্রতিমাসে কেউ না কেউ ছুটিতে থাকে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপর থেকে দেখলে মনে হবে নগর পরিকল্পনা শাখার কাজ স্বাভাবিক চলমান। কিন্তু না, ভেতরে কোনো কাজ চলে না। আরডিএ’র আইন অনুযায়ী কোনো ফাইল এক টেবিলে তিনদিনের বেশি পড়ে থাকার কথা না। কিন্তু বাস্তবে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকে টেবিলের উপর বা টেবিলের ডয়ারে। এতে চরম হয়রানির শিকার হন এই শাখায় সেবা নিতে যাওয়া লোকজন।

নগরীর হেতেমখাঁ এলাকার বজলুর রশিদ জানান, তার চাচার একটি বহুতল ভবন করার জন্য আরডিএ অফিসে তিনি এনওসি নিতে যান। জরুরী ফ্রিতে টাকাও দেন। কিন্তু সেই এনওসি ১৫দিনের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও চারমাস পর দেয়া হয়েছে। সাহেব বাজরের আব্দুর রহমান জানান, চার মাস আগে এনওসির জন্য কাগজ পত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনো এনওসি পাইনি। আরডিএ অফিসে গেলে এই কাগজ নাই, সেই কাগজ নাই ওযুহাতে আমাদের মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছে আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখা।

শুধু আব্দুর রহমান বা বজলুর রহমানই নয়, আরডিএ’র এনওসি নিতে যাওয়া প্রায় সব গ্রাহকেরই অবস্থা একই। তবে যে সেবার আইন নাই, সেই সেবায় অতিদ্রুত মিলে এনওসি। এই বিশেষ সেবাটি নেয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।

জানা গেছে, এ শাখার প্রধান আজেমরি আশরাফী অনুপস্থিতির দিক থেকে প্রথমে আছেন। রাজশাহীর মাস্টার প্ল্যান শুরুর পর থেকে শাখা প্রধান আজেমরি আশরাফী আরডিএ অফিসে মাসে ১৫ দিনও উপস্থিত থাকেন না। পুরো তিনটি বছর কারণে অকারণে মাস্টার প্ল্যানের ওযুহাতে তিনি ছুটিতে দিন পার করেছেন। তিনি বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে ঢাকায় থেকেছেন। বর্তমানও তিনি বিদেশ ভ্রমণসহ নানা কারণে ছুটিতে থাকছেন। আর এ শাখার প্রধান ছুটিতে থাকার কারণে একজন ব্যক্তি এনওসির ফাইল জমা দিয়ে জরুরী বা সাধারণ কোন সেবাতেই নির্ধারিত সময়ে এনওসি পাননি। কারণ তিনি ছুটিতে থাকা মানে এই শাখার পুরো কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া।

তারপরও তিনি ছুটি কাটান কারণে অবকারণে। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় সেবা গ্রহিতাদের। এরপর রয়েছে সার্ভেয়ার আব্দুল কাদের। একজন সার্ভেয়ার দিয়ে চলছে এই শাখার কাজ। তিনি কখনো ছুটি থাকলে আবার কাজ বন্ধ। বলা যায়, এই শাখার একজন কর্মচারি অফিসে অনুপস্থিত বা ছুটিতে থাকলে পুরো শাখার কাজ বন্ধ থাকে। কারণ একে অপরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত হলো আরডিএ’র এ শাখা। তবে এ শাখার বড় কর্তা ছাড়া বাকি কর্মচারিদের ছুটি বা অনুপস্থিতির হার অনেক কম। এখন প্রশ্ন হলো, জরুরী ভাবে ফ্রি দিয়ে যদি গ্রাহককে দীর্ঘদিন পর এনওসি দেয়া হয়, তাহলে কেন জরুরী ফ্রি নেয়া হয়? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এমনিতেই আরডিএ’র লোকবল কম। তার উপর পরিকল্পনা বিভাগের শাখা প্রধান কিভাবে প্রতি মাসে ছুটি কাটান। উধ্বর্তন কর্মকর্তরাই বা কিভাবে তাকে ছুটি দেন?

বিষয়টি জানার জন্য গত রোববার দুপুরে নগর পরিকল্পনা শাখার প্রধান আজেমরি আশরাফী দপ্তরে যাওয়া হয়। তার সাথে সাক্ষাত করতে চাইলে অনুমোতি মেলেনি। বাইরের কর্মচারিরা বলেন, সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চেয়ারম্যানের নিষেধ আছে। যার কারণে তিনি দেখাও করবেন না, কথাও বলবেন না। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

বিষয়টি নিয়ে আরডিএ’র চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে তার দপ্তরে গেলেও ঘটে একই ঘটনা। চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার জন্য গেলে সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারি জানান, চেয়ারম্যান স্যার মিটিংয়ে আছেন। পরে যোগাযোগ করেন। পরে রোববার দুপুর ২টার পর চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।