আরএমপি পুলিশের সফলতা ম্লান করেছিল যেসব ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত ৭ মে রাজশাহী নগরীর বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে সহকারী উপ-পরিদর্শককে (এএসআই) শামীম হোসনেক প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিন ৮ মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশে ফাঁড়ির এএসআই শামীম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে গত ৯ জুন রাজশাহী মহানগর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপরিদর্শকের (এসআই) ওবাইদুল কবির সুমন (৩৫) ও আরেক নারী এসআই পলি আক্তারের বিরুদ্ধে (৩০) সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলার বাদী ছিলেন সুমনের স্ত্রী। মামলার দুই আসামি পরস্পর পরকীয়া সম্পর্কের জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ তুলে  ওই মামলাটি দায়ের করেন সুমনের স্ত্রী।

অপরদিকে রাজশাহীতে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাদিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। নগরীর শিরোইল এলাকার ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী ড. তানবীর হাবিব গত ১৭ নভেম্বর আদালতেরমামলাটি দায়ের করেন।

নাদিমউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে এই থানায় কর্মরত থাকায় নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এছাড়া নিজেদের মধ্যে কন্দলেও জড়িয়ে পড়িয়েছিলে অনেকে। নগরীর বোয়ালিয়া থানার এক মুন্সি ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে জীবন নাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় জিডি পর্যন্ত করেছিলেন।

এদিকে চলতিব ছরের ৮ জানুয়ারি জুয়া খেলতে গিয়ে ৯ পুলিশ সদস্যকে আটক হয়েছিলেন। নগরীর একটি আবাসিক হোটেলে বসে জুয়া খেলা অবস্থায় ধরে পড়েছিলেন হাবিলদার বারেক, হাবিলদার মিজান, কনস্টেবল আফজাল, সালাম, ফরহাদ, শাহেদ, খগেন, রফিক ও করিম। তাদের মধ্যে আরএমপির ৬জনকে পরের দিন বরখাস্ত করা হয়।

এভাবে তাঁদের মতো গত ৪-৫ বছর ধরে নগরীর একই থানায় অবস্থান করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন অন্তত শতাধিক এসআই ও এএসআই। কেউ সরসারি মাদককারবারিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। এর বাইরে অন্তত দুইশতাধিক পুলিশ কনস্টেবলদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। এ কারণে আরএমপির প্রায় ১০০০ পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন থানায় বদলির সিদ্ধান্ত করা হয়। আরএমপি পুলিশের সফলতাগুলো ধরে রাখতে এর কোনো বিকল্প ছিল না বলেও দাবি করেছেন অনেক পুলিশ সদস্য।

এরই মধ্যে সোমবার বদলি করা হয় ২১৮ জন এসএআই ও এএআসইকে। আর প্রায় ৭০০ কনস্টেবলকে বদলির চূড়ান্ত প্রক্রিয়াও চলছে।

বিষয়টি স্বীকারও করেছেন মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর থেকেই প্রায় দেড় বছর সময় দিয়েছে থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু অনেকেই নানা বিতর্কে থেকে সরে আসতে পারেননি। ফলে এখন আর কাউকে সময় দেওয়া যাবে না। থানায় কর্মরত এসআই, এসআই থেকে শুরু করে কনস্টেবলদেরও বদলি করা হবে। এক কথায় ঢেলে সাজানো হবে আরএমপি পুলিশকে।’

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘আরএমপিতে প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য আছে। এর মধ্যে থানায় কর্মরত আছে এসআই, এএসআই পদমর্যদার ২১৮ জনকে। আর কনস্টেবল রয়েছে ৬০০-৭০০। এদের কাউকেই আর বর্তমান থানায় রাখা হবে না। চোখ বন্ধ করে এদের বদলি ফাইলে স্বাক্ষর করছি। সবাইকে পর্যায়ক্রমে অন্য থানায় বদলি করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার ২১৮ জন এসআই, এএসআইকে বদলি করা হয়েছে বিভিন্ন থানায়।

ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, বর্তমান পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক রাজশাহী মহানগরীতে যোগদানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোর দ্রুত ক্লু উদ্ধারে তিনি নগরীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসেন। এছাড়াও পুলিশের সাইবার ক্রামইম ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর ফলে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোও কমে আসতে থাকে। কিন্তু এতোকিছুর পরেও নগরীর ১২টি থানায় কর্মরত অনেক পুলিশ সদস্য নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এদের বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে গোপনে তদন্ত শুরু করা হয়। এতে অনেকের বিরুদ্ধেই বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। কারো কারো বিরুদ্ধে সহকর্মীদের সঙ্গে পরোকীয়াতেও জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে নগরীর মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইফতেখার আলমের লিঙ্গ কর্তনের ঘটনাও ঘটে। এসব বিষয়ে মহানগর পুলিশের সাফল্যগুলো ম্লান হতে শুরু করে। ফলে পুলিশ কমিশনার সব থানার পুলিশ সদস্যদের গণবদলির সিদ্ধান্ত নেন।

স/আর