আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এক বছর, ১২৩০ অপরাধ নিষ্পত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার  মো. আবু কালাম সিদ্দিকের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজশাহী মহানগর এলাকার অপরাধ দমনে ও মহানগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করা হয়েছিল। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সফলতার সাথে নগর পুলিশের বিশেষ এই ইউনিটটি এক বছর পূর্ণ করলো। এক বছরে  এই ইউনিটটি মেট্রোপলিটন এলাকার অসংখ্য ক্লুবিহীন ঘটনা উদঘাটন, অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেফতার করে অধিকাংশ ঘটনা বা সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গত এ বছরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধসহ সর্বমোট ১৩২১ টির অভিযোগের মধ্যে ১২৩০ টি অপরাধ এর নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি’র নব্য গঠিত সাইবার ক্রাইম ইউনিট। সেই হিসেবে সফলতার হার প্রায় ৯৩ শতাংশেরও উপরে।

আরএমপি সূত্রে জানা গেছে- শুরুতে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে একজন এসআই, একজন এএসআই এবং ৩ জন কনস্টেবল অর্থাৎ মোট ৬ জন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সদস্য নিয়ে এই ইউনিট যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে আরও কিছু প্রশিক্ষিত সদস্য যুক্ত হয়ে বর্তমানে একজন জন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও চৌকস টিম এই ইউনিটে কাজ করছে। সরাসরি অপারেশনাল টিম হিসেবে ফিল্ডে কাজ না করার কারণে অনেকেই এই ইউনিটের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নন। মূলত এই ইউনিট রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল কার্যক্রমে বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরন শনাক্তকরণসহ গ্রেফতারে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়- গত ১ বছরে রাজশাহী মেট্রোপলিটনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে প্রায় ৩৬০ টির মত ফেইসবুক সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। উল্লেখযোগ্য ফেইসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি/ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করা, ফেইসবুকে যে কারো ছবি দিয়ে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দিয়ে মানহানি করা, ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাকড করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠানোসহ ফেইসবুকের মাধ্যমে সংঘটিত সকল অপরাধ। ফেইসবুক সংক্রান্ত প্রায় ৩৬০ টি অপরাধের মধ্যে ৩৪০ টির মত নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এরপর আছে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মানি ট্রান্সজেকশন/ ট্রান্সফার সিস্টেমের অপরাধ। বিভিন্ন ভুয়া অফারের মাধ্যমে পিনকোড নিয়ে বিকাশ একাউন্ট হ্যাকড, ভুয়া রেজিস্ট্রেশন, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিকাশ, নগদ ও রকেট চক্রের পরিকল্পনামাফিক ফাঁদসহ অন্যান্য অপরাধ। গত ১ বছরে এই সংক্রান্ত প্রায় ৫০ টি’র অভিযোগ এসেছে এবং সব কয়টির নিষ্পত্তি করেছে এই ইউনিট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে- ইমো সংক্রান্ত ৩ টি অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে এবং সব কয়টিরই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইমো ব্যবহার করে সম্পর্ক স্থাপন ও আর্থিক প্রতারণা মত ঘটনা।পর্ণগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধের প্রায় ৫০ টির মত অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। এই সংক্রান্ত অপরাধের সব কয়টির অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছে এই ইউনিট। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো কিন্তু বর্তমানে নেই তাই সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকাকে হেনস্থা বা ব্লাকমেইল করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ছবি/ ভিডিও প্রচার করা। ই-মেইল সংক্রান্ত ৩ টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ২ টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে এবং একটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো ই-মেইল হ্যাকড করে বিভিন্ন অপ্রতিকর তথ্য পাঠানো ও ভুয়া বা বেনামে মেইল আইডি খুলে বিভিন্ন অপরাধ করা। টিকটক/লাইকি সংক্রান্ত মোট ৫ টি অভিযোগ এসেছে এবং সবগুলোরই শনাক্তপূর্বক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো- বিভিন্ন উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করা।

আরএমপি সূত্র আরও জানায়- প্রায় ৩০ টির মত অপহরণের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে এবং প্রত্যেকটি ঘটনার ভিক্টিম উদ্ধারসহ আসামি শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো অপ্রাপ্ত/অল্প বয়সী মেয়ে/ছেলেদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপহরণ করা, বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে অপহরণ করা। হারানো বা চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারের মত অনেক সফলতা রয়েছে এই ইউনিটের। গত ১ বছরে প্রায় ৮২০ টির মত অভিযোগ/জিডি এসেছে এবং প্রায় ৭৫০ টি মোবাইল উদ্ধার করার তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

উপরোক্ত বিভিন্ন অপরাধ ছাড়াও মেট্রোপলিটন এলাকার অন্যান্য ক্লু-বিহীন ঘটনা ও সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত পূর্বক গ্রেফতারে প্রতিনিয়ত নিরবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলছে এই ইউনিট। এছাড়াও আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট বাংলাদেশের সকল ইউনিটের মধ্যে সর্বপ্রথম কিশোরদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে। যেখানে রাজশাহী মহানগর এলাকার প্রায় ৫০০ জনের মত কিশোরের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী মহানগর এলাকার প্রায় ০৯ টির মত কিশোর গ্যাং এর বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিদিন আরএমপির প্রত্যেকটি থানার মাধ্যমে ডাটাবেজ এ সংরক্ষিত কিশোরদের তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্র জানায়, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশিং সেবার অন্যতম বহুল তথ্য সম্বলিত ‘হ্যালো আরএমপি’ এ্যাপস সাইবার ক্রাইম ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত হয়। যে কেউ পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন অভিযোগ ও তথ্য প্রদান করতে পারবে। এছাড়াও এই এ্যাপস এর মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল তথ্য অতি সহজেই পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৪ টির মত অভিযোগ এই এ্যাপস এর মাধ্যমে পাওয়া গেছে এবং সবগুলো অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী মহানগর এলাকার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা মনিটরিং, বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অপারেশন কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং সেন্টার (সেন্ট্রাল সিসি ক্যামেরা ইউনিট) ও পরিচালিত হয় আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট মাধ্যমে।

রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, আরএমপি কমিশনার মহোদয়ের নিরলস প্রচেষ্টায় এই ইউনিটটি গঠিত হয়। এই ইউনিটের মাধ্যমে মহানগর এলাকায় ক্লুবিহীন অসংখ্য সমস্যার সমাধান হয়েছে। যা নজিরবিহীন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও আরএমপি কমিশনার মহোদয়ের চৌকস দিক-নির্দেশনায় অপরাধ দমনে এই ইউনিটটি শতভাগ সফলতার সাথে কাজ করে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এএইচএস