‘আমি করোনায় আক্রান্ত, নিয়ে যান’ বলে কিশোরের ৪৭৩ কল, মামলা…

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘আমি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান’—এই কথা বলে পাঁচটি সরকারি নম্বরে ৪৭৩ বার কল করেছে নাটোরের এক কিশোর। ব্যতিব্যস্ত হয়ে তাকে খুঁজে বের করার পর জানা গেল, সে মজা করে এমনটা করেছে। সাধারণ কৃষক পরিবারের কিশোরের এমন কাণ্ডে পুলিশও বিস্মিত। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই কিশোর পাঁচটি সরকারি নম্বরে কল করে। সরকারি তথ্যসেবা নম্বর ৩৩৩–এ ৩১৬ বার, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) ৬৩ বার, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ২৩ বার, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে ৩১ বার এবং করোনার বিষয়ে পরামর্শের জন্য আইইডিসিআরকে দেওয়া নম্বর ১০৬৫৫–এ ৪০ বার কলে করেছে ওই কিশোর। ৬ এপ্রিল থেকে সে ফোন করা শুরু করে।

পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরের আকুতি শুনে পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ফোনে তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে। কিন্তু কিশোর নাটোর শহরের যে মহল্লায় তার বাড়ির অবস্থান জানায়, সেখানে তাকে পাওয়া যায় না। একপর্যায়ে স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলামও ওই কিশোরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সর্বশেষ শহরের আলাইপুরে যে ঠিকানা দেয়, সেই ঠিকানাতেও তাকে পাওয়া যায় না। তাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান সবাই। অবশেষে মুঠোফোন প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, ছেলেটি নাটোরের শহরের কোথাও নেই। সে শহর থেকে নয় কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার এক গ্রামে অবস্থান করছে। গতকাল সোমবার রাতে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ বিবৃতিতে বলেন, ১২ বছরের কিশোর সে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। টেলিভিশন থেকে নম্বরগুলো নিয়ে কয়েক দিন ধরে সে ফোনে মজা করছিল। ওই কিশোর শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছে। ফোনে তাঁর সঙ্গে চিকিৎসককে দিয়ে কথা বলানো হয়েছে। এ সময় তাকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। সব কটি উপসর্গ আছে বলে সে উত্তর দিয়েছিল। তার বাবা–মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সে মিথ্যাচার করেছে। বলেছে, ভয়ে করোনায় আক্রান্তের বিষয়টি সে মা–বাবাকে জানায়নি। সাহায্যের আকুতি জানিয়ে সে কান্নাকাটিও করেছে।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘ছেলেটির বক্তব্য অনুসারে করোনাভাইরাসের উপসর্গ মিলে যাওয়ায় আমরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কারণ, ওই কিশোরের কাছ থেকে করোনাভাইরাস অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমরা ছেলেটিকে উদ্ধারের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনকে নিয়ে শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সন্ধান চালিয়েছি। এতবার ফোন করায় ওপর থেকে আমাদের প্রতি চাপ ছিল। ছেলেটিকে উদ্ধারের পর জানা যায়, সব সে বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। সবাইকে বিভ্রান্ত করেছে। একজন সাধারণ কৃষক পরিবারের ওই কিশোর কীভাবে এতগুলো মানুষকে হয়রানি করতে পারে, তা আমরা ভেবে পাচ্ছি না।’

পুলিশ কিশোরটির কাছ থেকে মুঠোফোনটি উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় আটক ওই কিশোরের বিরুদ্ধে পুলিশ নাটোর সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে সংশোধনাগারে পাঠানো হবে।

সূত্র: প্রথম আলো