সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
আমার ছেলেকে কয়জন মিলে চেপে ধরেছিল ? কয়জন লেগেছে ওকে হত্যা করতে? আমার ছেলেটাও কি গরুর মতো ছটফট করেছিল বাঁচার জন্য? ওর কার কথা মনে পড়েছিল? আমাকে কি ডেকেছে?’
এই আকুতি এক সন্তানহারা মায়ের। এই বিলাপ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মায়ের। নির্মম মৃত্যুর শিকার দিয়াজকে ছাড়া প্রথম কোরবানির ঈদ করছেন মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। কোরবানির দৃশ্য দেখে নিজের সন্তান ‘খুন হওয়ার’ চিত্র কল্পনা করে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন এই অসহায় মা।
গত বছরের ২০ নভেম্বর নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। প্রথম দফা ময়নাতদন্তে দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে বলে তথ্য এলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তাকে শ্বাসরোধে খুন করা হয়েছে বলে তথ্য এসেছে। দিয়াজের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি।
দিয়াজের মৃত্যুর পর থেকে সন্তানের শোকে তার মায়ের পাগলপ্রায় অবস্থার কথা বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। বিভিন্ন সময় দিয়াজের মায়ের সন্তানের জন্য আহাজারির ছবি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।
শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে বাটা গলিতে জাহেদা আমিনের বাসায় আরেকবার রচিত হয়েছে হৃদয়বিদারক পটভূমি। পাশাপাশি বাসায় থাকেন দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা।
নিপা বলেন, আমাদের বাসার নিচে সব গরু জড়ো করে কোরবানি দেয়া হচ্ছিল। আমার আম্মা উপর থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেটা দেখছিলেন। আমাদের গরুটাকে জবাই করতে দেখার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেন আম্মা। তারপর অজ্ঞান হয়ে যান।
‘জ্ঞান ফেরার পর কাঁদছেন আর শুধু বলছেন, আমার ছেলেকে কয়জন মিলে চেপে ধরেছিল? আমার ছেলেটাও কি গরুর মত ছটফট করেছিল বাঁচার জন্য? ও কি আম্মু বলে আমাকে ডেকেছে?’
নিপা জানান, সকাল থেকে তিনবার অজ্ঞান হওয়ার পর জাহেদা আমিনকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠে নামাজে বসেন। সেসময়ও দিয়াজের কথা বলে বিলাপ ধরে কাঁদতে থাকেন।
‘আমার আম্মা প্রতিবছর কয়েকজনের সঙ্গে মিলে কোরবানি দিতেন। গতবছর দিয়াজ বলছিল, আম্মু, মানুষের সঙ্গে কোরবানি আর দেব না। আমি তো চাকরি পেয়েছি। সামনের বছর আমরা নিজেরা কোরবানি দেব। ’
‘আমার ভাইয়ের আর কোরবানি দেওয়া হয়নি। সে নিজেই…’ এতটুকু বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিপাও।
মায়ের আহাজারির কথা তুলে ধরে নিপা ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কে দেবে আমার মায়ের প্রশ্নের উত্তর?
মৃত্যুর সময় দিয়াজ ইরফান চৌধুরী (২৭) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দিয়াজ সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ হাটহাজারী থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু ২৪ নভেম্বর আদালতে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ওই মামলা তদন্ত করছে সিআইডি।
আদালতের নির্দেশে দিয়াজের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। চলতি বছরের ৩০ জুলাই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পায় সিআইডি। প্রতিবেদনে দিয়াজের মৃত্যু আঘাতপূর্বক শ্বাসরোধজিত বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত ৭ আগস্ট দিয়াজের মায়ের দায়ের করা মামলার আসামিদের তদন্তের প্রয়োজনের গ্রেফতারের জন্য সিআইডিকে আদেশ দেন আদালত। এছাড়া তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে আছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামশেদুল আলম চৌধুরী, স্থগিত কমিটির প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম জিসান, ছাত্রলীগ কর্মী আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আব্দুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমান। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। বাংলানিউজ