আবারও আলোচনায় করোনা রিলিফ বিল

যুক্তরাষ্ট্রে ‘করোনা রিলিফ প্যাকেজ’ নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে।

আবারও মাথাপিছু ১২০০ ডলারের স্টিমুলাস চেক, বেকার ভাতা বাবদ সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে প্রদান, এয়ালাইন্স শিল্পকে উদ্ধারের জন্যে ৩২ বিলিয়ন ডলারের পেরোল সাপোর্ট প্রোগ্রাম, ক্ষুদ্র ব্যবসাকে ঘুরে দাঁড়াতে পে-চেক প্রটেকশন প্রোগ্রামের সম্প্রসারণ, দ্বাদশ গ্রেডের স্কুলসমূহের জন্যে ১৮২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ, ৩৯ বিলিয়ন ডলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্যে, চাইল্ড কেয়ার বাবদ আরো ৫৭ বিলিয়ন ডলার, স্টেট-সিটির সংকট লাঘবে ৪৩৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের পাশাপাশি করোনা টেস্ট ও ট্রেসিং বাবদ ৭৫ বিলিয়ন ডলার তথা ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের করোনা রিলিফ বিল নিয়ে সোমবার পুনরায় হোয়াইট হাউজ ও ডেমক্র্যাটদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।

উল্লেখ্য, করোনায় বিপর্যস্ত মানুষ, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানকে অর্থ সহায়তার অভিপ্রায়ে মাচ-এপ্রিলে ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলারের চারটি করোনা রিলিফ বিল পাশ হয় কংগ্রেসে। সেগুলোতে রিপাবলিকান আর ডেমক্র্যাটদের ঐক্যমত ছিল। জুন-জুলাইতেও করোনার প্রকোপ সারা আমেরিকায় মারাত্মক আকারে বিরাজিত থাকায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। এতে বেকারের সংখ্যা তেমন কমেনি। সিংহভাগ ব্যবসা-অফিস খোলা সম্ভব হয়নি। এমনি অবস্থায় ৩১ জুলাই শেষ হয়ে যায় সাপ্তাহিক ৬০০ ডলার হারে বেকার ভাতা প্রদানের কর্মসূচি। সে সময়েও ২২ মিলিয়ন তথা দুই কোটি ২০ লক্ষাধিক আমেরিকান বেকার ছিলেন। এখনও দুই কোটির মত মানুষ বেকার জীবন-যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অসহনীয় পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ১৫ মে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমক্র্যাটরা ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ‘হিরোজ এ্যাক্ট’ পাশ করেন।

 

সেখানে মাথাপিছু ১২০০ ডলার করে চেক প্রদানের পাশাপাশি সাপ্তাহিক বেকার ভাতা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০০ ডলার করে অব্যাহত রাখার কথা ছিল। ডেমক্র্যাটরা আশা করেছিলেন চলমান পরিস্থিতিকে অনুধাবনের পর রিপাবলিকান শাসিত সিনেটেও অনুরুপ বিল পাশ হবে। কিন্তু রিপাবলিকানরা সেটি কনেনি। তার পরিবর্তে জুলাইয়ের শেষে সিনেটে একটি প্রস্তাব পেশ করেন রিপাবলিকানরা। সেখানে সাপ্তাহিক বেকার ভাতা ৩০০ ডলার করার কথা ছিল। সেটি বিল আকারে উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি সিনেটে ডেমক্র্যাটরা বেঁকে বসায়। এমনি অচলাবস্থায় ট্রাম্পের অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুনুচিন এবং হোয়াইট হাউজের চীফ অফিসার আলোচনা শুরু করেছিলেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার (ডেমক্র্যাট) ন্যান্সি পেলসী এবং সিনেটে ডেমক্র্যাট লিডার চাক শুমারের সাথে। লাগাতার বৈঠকেও সমঝোতা হয়নি সাপ্তাহিক বেকার ভাতা নিয়ে। রিপাবলিকানরা ৩০০ ডলারের বেশি দিতে নারাজ।

অপরদিকে ডেমক্র্যাটরা ৬০০ ডলারের নীচে নামতে রাজি হননি। তবে উভয় পক্ষই এককালিন মাথাপিছু ১২০০ ডলারের চেক প্রদানে সম্মত ছিলেন। আগস্টের শেষে সে সমঝোতা বৈঠক সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় ঝুলে পড়েছিল। এমনি অবস্থায় গত সপ্তাহে সাড়ে ৩ ডজনের অধিক সংগ্রেসম্যান যুক্ত স্বাক্ষরের এক পত্রে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের নেতাদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন চলমান সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি করোনা রিলিফ বিলের ব্যাপারে ঐক্যমতে উপনীত হবার জন্যে। উভয় পক্ষকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও করোনা রিলিফ বিল পাশ হওয়া জরুরী বলে তারা মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট প্রার্থনার সময় সাধারণ ভোটারের সংকট-নিয়ে তারা কী বলবেন, সেটি মুখ্য হয়ে দেখা দিতে পারে। তোপের মুখে পড়তে পারেন ক্ষুধার্ত ভোটারদের।

সম্ভবত: সে কারণেই সোমবার বিকেলে স্থবিরতায় আক্রান্ত সমঝোতা বৈঠক পুনরায় শুরু হয়েছে। স্পিকার ও অর্থ মন্ত্রী উভয়েই কিছুটা নমনীয় ভাব নিয়ে বৈঠক শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ডেমক্র্যাটরা ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের স্থলে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। তবে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির সিনেটররা কোনভাবেই ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠতে চাচ্ছেন না বলে শোনা গেছে। এরফলে সাপ্তাহিক বেকার ভাতার পরিমাণ চারশত ডলারে উঠেছে বলে জানা যায়। ভোটের কারণেই এবার উভয় পক্ষ সমঝোতায় উপনীত হবেন বলে সকলে আশা করছেন। যদিও স্টেট ও সিটি সমূহের নাজুক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কোন ধরনের অর্থ সহায়তার পক্ষে নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অধিকাংশ স্টেট ও সিটিতেই ডেমক্র্যাটদের রাজত্ব বিরাজিত থাকায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ। মানবিকতার চেয়ে রাজনৈতিক ফায়দাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে করা হচ্ছে করোনা বিধ্বস্ত জনপদ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টারাও স্পষ্টভাবে মন্তব্য করেছেন যে, আর্থিক প্রণোদনা ব্যতিত অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা করা সম্ভব নয়। নাগরিকেরা যে অর্থ সংকটে নিপতিত হয়েছেন সেটিও সচল করা সম্ভব হবে না স্টিমুলাস চেক ও সাপ্তাহিক বেকার ভাতা (ফেডারেল)পুনরায় চালু না করা হলে।