আবরার হত্যা মামলা : বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় দেওয়া বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের  অভিযোগ তুলেছেন মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম ওরফে পিংকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল ইসলাম। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি ও আইন সচিবের দপ্তরে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তিনি লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। সেখানে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানিয়েছেন তিনি।

মো. রবিউল ইসলামের অভিযোগ, এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের ক্ষেত্রে বিচারক মামলাটির তিনজন সাক্ষির জবানবন্দি অপরাধমূলক প্রমাণ (ইনক্রিমিনেটিং অ্যাভিডেন্স) হিসেবে প্রতিস্থাপন করে সাজা দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বিচারিক আদালতের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর রায়ে উল্লেখ জবানবন্দির সাথে মামলার ২২ নম্বর সাক্ষী মো. গালিব, ২৭ নম্বর সাক্ষী ওয়াহিদুর রহমান রাফসান ও ২৮ নম্বর সাক্ষী মো. সাইফুল ইসলামের জবানবন্দি মিলিয়ে দেখেন মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম ওরফে পিংকের বাবা মো. রবিউল ইসলাম।

জবানবন্দির কোথাও অমর্ত্য ইসলামের নাম জড়িয়ে কিছু না বললেও এই তিন সাক্ষীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ব্যক্তিগত স্বার্থে বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে মৃত্যৃদণ্ড দিয়েছেন।

‘ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডার্স, ২০০৯’ এর ৬৬৭ বিধির অধীনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের আচরণবিধির ৪ এবং ১৬ নাম্বার বিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে এ মামলার রায় প্রদানকারী বিচারক অসদাচরণ করেছেন। যে কারণে বাংলাদেশ জুডিমিয়াল সার্ভিস শৃঙ্খলা বিধিমালা ২০১৭ এর অধীনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল ইসলামের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু কালের কণ্ঠকে বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে।”

বিচারিক আদালতেও অমর্ত্য ইসলামের আইনজীবী ছিলেন আজিজুর রহমান দুলু।  খুব শিগগিরই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অমর্ত্য ইসলামের আপিল দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি।

খালাস চেয়ে আপিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত সেতুর

এদিকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি এস এম মাহমুদ সেতু। বুধবার হাইকোর্টের সংশ্রিষ্ট শাখায় এ আপিল দাযের করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।  কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহে আপিল গ্রহণযোগ্যতারে বিষয়ে ষংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।”

গত বছর ৮ ডিসেম্বর সেই মামলার রায়ে ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করেন ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন তিনি।

পরে গত ৬ জানুয়ারি ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য রায়সহ নথিপত্র ‘ডেথ রেফারেন্স’ হিসেবে পাঠানো হয় হাইকোর্টে। মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও রায়সহ মোট ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার নথি হাই কোর্টে পাঠানো হয়।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাস্তবায়নের আগে হাই কোর্টের অনুমোদন নিতে হয়। সেই অনুমোদনের জন্য মামলার নথি পাঠানো হয়ে হাই কোর্টে, যাকে ‘ডেথ রেফারেন্স’ বলে।

এই ডেথ রেফারেন্স ও অন্যান্য নথির সমন্বয়ে তৈরি হয় মামলার পেপারবুক। মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করারও সুযোগ পান। পেপারবুক তৈরি হলে হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ