‘আপনি ঘুমান, আপনার বাড়ি পাহারা দেব আমরা’

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

‘আপনি ঘুমান আপনার বাড়ি পাহারা দেবো আমরা’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামে রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছে প্রায় শতাধিক যুবক। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ঠেকাতে স্বেচ্ছায় তারা প্রতিরাতে পাহারার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানা যায়।

ইদানিং গ্রামে প্রতি রাতে চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গ্রামবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আপনি ঘুমান, আমার গ্রাম পাহারা আমি দেব’। পাশাপাশি রাত এগারোটার পরে বাইরের কোনো মানুষ গ্রামে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না।

যদি কাউকে সন্দেহ হয় সে ব্যক্তিকে যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনে পুলিশের হাতে সোপর্দ করব। ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে চুরির ঘটনা। অধিকাংশ চোরই ধরা না পড়ে থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনোভাবেই তাদের দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না। আস্থাহীনতায় অনেকেই অভিযোগ জানাতে এখন আর থানায় যাচ্ছেন না। ফলে চুরি ঠেকাতে উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন উঠতি বয়সের যুবকসহ স্থানীয় বিভিন্ন বয়সের লোকজন।

উপজেলায় গত একমাসে মোটরসাইকেল, দোকান ও বাসা-বাড়ির মালামাল, অটোরিকশা, শ্যালো মেশিন, স্বর্ণালঙ্কার, গরুচুরিসহ অর্ধশতাধিক ঘটনা ঘটেছে। এতে দিন দিন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। চোরের দৌরাত্ম্য থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কোন পরিবার।

প্রতি রাতে প্রশাসনের টহল থাকা সত্ত্বেও গ্রামের মধ্যে চুরি ডাকাতির মতো ঘটনা অবরোহ ঘটতে থাকায় হতাশ হয়ে পড়ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। সম্প্রতি শংকরপুর গ্রামে মাওলাকার বাড়ি থেকে একটি এপাচি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এ সময় অস্ত্র ঠেকিয়ে সোনার গহনা টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায় তারা।

কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ইকরামুল ইসলামের মোটরসাইকেলটি গত ২৩ নভেম্বর গ্রিলের তালা ভেঙে চুরি করে নিয়ে যায়। সেকেন্দারকাটির খোকনের বাড়ি থেকে ছাদের সিড়ি ঘর দিয়ে চোর ঢুকে ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা পয়সা ও স্বর্ণের গহনা চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদারকি ও টহল বাড়িয়ে দিলে এমন চুরির ঘটনা কমে আসবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ মূল্যবান সম্পদ ও আয়ের উৎস হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়বে। এই সংঘবদ্ধ চোরের কাছ থেকে রক্ষা পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

গ্রামে পাহারা দেওয়ার যুবক হুমায়ন কবীর জিকো জানান, প্রতিদিন চোরের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। যান মালের স্বার্থে আমরা গ্রামে নিজেরাই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি।

আরেক যুবক সোলাইমান বলেন, প্রতি রাতে গৃহস্থের কোনো না কোনো বাড়ি থেকে মোটর সাইকেল, সোনা, টাকা ও গরু চুরি যেন প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের পর দিন অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামের লোকজন যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে সে লক্ষে আমরা শতাধিক যুবক এ হয়ে রাতে গ্রাম পাহারা দিচ্ছি।

কবির নামে গ্রামে রাতে পাহারা দেওয়া একজন বলেন, চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেও এখনো পর্যন্ত চুরির মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। বাধ্য হয়ে চুরি ঠেকাতে নিজেরাই পাহারা দিচ্ছি নিজেদের গ্রাম।

স্থানীয় যুবক গাজী জয়নাল আবেদীন জানান, গ্রামে চুরিরোধে রাত জেগে গ্রামে পাহারা দেওয়ার পর আজ ৪/৫ দিন কোনো বাড়িতে চুরি হয়নি। গ্রামের সবাইকে নিয়ে এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করে পর্যায়ক্রমে গ্রামে পাহারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র চ্যাটার্জি বলেন, চুরি বন্ধে গ্রামের ছেলেরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমি খুশি। আমি গ্রামের মধ্যে ও আশপাশের বিভিন্ন মসজিদে চুরির ব্যাপারে সবাইকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা চালাতে বলেছি। যে সমস্ত বাড়িতে চুরি হয়েছে সে ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত করে চোরদের আটক ও চুরির মালামাল উদ্ধারে পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন বলে আমি দাবি করছি।

এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত বলেন, এ বিষয়ে তদন্তের ভার সাব-ইন্সেপেক্টর স্বপনকে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জি/আর