শুক্রবার , ১৬ আগস্ট ২০২৪ | ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

আন্দোলনে সরকারি মেডিকেলে ৪০৭ জনের মৃত্যু

Paris
আগস্ট ১৬, ২০২৪ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

দুই ছেলে এক মেয়ের জনক শাহ আলম (৪০)। কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। গত ১৯ জুলাই কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে উত্তর বাড্ডায় পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হন। তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। প্রায় চার সপ্তাহ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ আগস্ট মারা যান শাহ আলম। তার এমন মৃত্যুতে অন্ধকার নেমে এসেছে পরিবারে। শাহ আলমের ভাই আবু তাহের বলেন, ‘পরিবার নিয়ে রামপুরার ওয়াপদা সড়কে থাকেন তার ভাই। আন্দোলনের কারণে আধাবেলা ডিউটি ছিল তার। কাজ শেষে ফেরার পথে বুকে গুলিবিদ্ধ হন।’

শুধু শাহ আলমই নন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে এমন চরম পরিণতির শিকার হয়েছেন কয়েকশ নিরীহ মানুষ। প্রাণ ঝরেছে কোমলমতি শিশু, শিক্ষার্থী, রিকশাচালক, শ্রমিক, সাংবাদিক, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কতজন প্রাণ হারিয়েছেন- এর প্রকৃত তথ্য এখনো জানা যায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালেই মারা গেছে ৪০৭ জন। এর মধ্যে, হাসপাতালে আনার আগে অর্থাৎ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশের। উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর গত ১৫ জুলাই থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যে এমন চিত্র পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেসরকারি হাসপাতালে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সেই হিসাব এখনো পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও মিরপুরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে লাশের মিছিল দেখা গিয়েছিল। এসব লাশের গুনতি সরকারি হিসাবে এখনো আসেনি বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিহত, আহত ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য সংগ্রহ এখনো চলমান রয়েছে। এর বাইরে হতাহতের বড় অংশ চিকিৎসা নিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতালে। সে সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠিও দিয়েছে অধিদপ্তর। তবে তিন দিনের মধ্যে তথ্য প্রদানের কথা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে-পরে ঠিক কত সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; কত সংখ্যক গুলিবিদ্ধ ও মারাত্মক আহত হয়েছেন- তা নিরুপণে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন।

গত ১৫ জুলাই থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা হিসাব বলছে- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলি, টিয়ারশেল ও অন্যান্য জখম নিয়ে চিকিৎসা পেতে সরকারি হাসপাতালে যান ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৪ হাজার ৫৫৪ জনকে ভর্তি করা হয়। আহতের ৫৭ শতাংশই ঢাকায়। এ ছাড়া এক হাজারেরও বেশি সংখ্যক আহত চিকিৎসা নিয়েছেন চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর ও রাজশাহীর হাসপাতালে। তাদের মধ্যে মারা যান ৪০৭ জন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২৯০ জনের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ১১৭ জনের।

বিভাগ অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ২৩৮ জনের মৃত্যু হয় ঢাকায়, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৪৮ জন, খুলনায় ৩৫ জন, রংপুরে ২৬ জন, রাজশাহী ও সিলেটে ২৩ জন করে, ময়মনসিংহে ১২ জন এবং বরিশালে মারা গেছেন দুইজন। তবে হাসপাতালভিত্তিক তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাঠপর্যায়ের তথ্য বলছে, ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সিংহভাগ হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও সোহওয়ার্দী হাসপাতালে। এ পর্যন্ত এ দুই হাসপাতালে ২০৮ জন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ও অন্যান্য মারাত্মক জখম হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ১৬৭ জন। এর মধ্যে ১০৭ জনের ময়নাতদন্ত হলেও ৬০টি লাশ স্বজনরা নিয়ে গেছেন ময়নাতদন্ত ছাড়াই।

একইভাবে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৪১ জনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে গেছেন স্বজনরা। এখনো চারটি লাশ পড়ে আছে এই হাসপাতালে। আবার অনেকের লাশ হাসপাতালেই আনা হয়নি। ফলে সরকারি হাসপাতালেই প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এর বাইরে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চারজন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনবার্সন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) তিনজন, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত মঙ্গলবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে জায়গা কম। লাশ আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ময়নাতদন্ত ও সুরতহালের জন্য বলা হয়েছিল, তারা আসেনি। বাধ্য হয়ে স্বজনরা এলে তাদের হাতে লাশ তুলে দিতে হয়েছে। এখনো চারজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। লাশগুলো পচে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম দফার আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়া নিয়ে বাধা ছিল। পরে ক্ষমতাসীনদের পতন হলে তথ্য সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়। এরপর তাগাদা দিলে ক্রমেই তথ্য আসতে থাকে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।’

আহতদের ঢল ছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। বিশেষ করে রামপুরা-বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর ও সাভারসহ ঢাকার আশপাশের এলাকগুলোতে চরম সংঘাতময় পরিস্থিতি ছিল। রামপুরা-বাড্ডা ও প্রগতি সরণিতে সংঘের্ষ আহত ও নিহতদের নেওয়া হয় মধ্যবাড্ডার এএমজেড হাসপাতাল ও বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতালে। এ দুই হাসপাতালেই প্রায় তিন হাজার আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মৃত্যু হয় অন্তত ৪০ জনের।

মিরপুরে সরকারি কোনো হাসপাতাল না থাকায় আহতদের নেওয়া হয় স্থানীয় ডা. আজমল হাসপাতাল, আলোক হেলথ কেয়ার হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, আল-হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও ডেলটা হাসপাতালে। এসব হাসপাতালে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সাভারে সংঘর্ষে হতাহতদের অধিকাংশকেই নেওয়া হয় এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ হাসপাতালে আহত মোট ২০৭ জনকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু এসব হাসপাতালই নয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বহু বেসরকারি হাসপাতালে হতাহতদের নেওয়া হলেও কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে। তথ্য চেয়ে গত ১২ আগস্ট সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সরকারি হাসপাতালগুলো সাড়া দিলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য প্রদানে অনীহা দেখা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ‘কাজের চাপের মধ্যেই সরকারি হাসপাতালগুলো তথ্য দিলেও দেয়নি বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তথ্য দিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণে সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিটি হলে প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।

তথ্য না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মুনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালসহ এলাকাভিত্তিক কিছু বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে আহতরা সেবা নিতে এসেছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠির কপি পাওয়ার পর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তথ্য না পাঠিয়ে থাকলে আবারও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগাদা দেওয়া হবে।’

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়