আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে টক্করে রাবণের ভরসা জনগণ

ভারতের উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর ৫৫ বছরের বেশি সময় ধরে ধর্মভিত্তিক সংগঠন সঙ্ঘ পরিবারের শক্ত ঘাঁটি। তবে সেখানে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নির্বাচনে হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী রাজনীতিতে নতুন আজাদ সমাজ পার্টির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ ওরফে রাবণ।

সঙ্ঘ পরিবারের মজবুত ঘাঁটিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে হারানোর কথা কী করে ভাবছেন, সে ব্যাপারে দলিত নেতা চন্দ্রশেখর বলেন- এই গোরক্ষপুরেই ১৯৭১ সালে হেরে গিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী টি এন সিংহ। ব্যর্থতার জন্যই তাঁকে সেবার হারিয়েছিল এলাকার মানুষ।

চন্দ্রশেখরের মতে, যোগী আদিত্যনাথের সরকারের ব্যর্থতার তালিকা কম দীর্ঘ নয়। বেকারত্ব, আইন-শৃঙ্খলা, দলিত নির্যাতন, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা- অভিযোগের শেষ নেই। ফলে মানুষই তাঁকে হারিয়ে দেবে।

পূর্ব উত্তরপ্রদেশের কোথাও রাবণের দলের কোনো সংগঠন নেই। শুরুতে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মেলাতে চাইলেও আসন নিয়ে দরকষাকষিতে ভেস্তে গেছে দু্ই দলের জোটের সম্ভাবনা।

এ অবস্থায় কয়েকটি ছোট এবং নতুন দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘সামাজিক পরিবর্তন মোর্চা’ গঠন করে উত্তরপ্রদেশে ভোট যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন চন্দ্রশেখর।

জানা গেছে, দলিতদের অধিকারসহ নানা বিষয়ে গত পাঁচ বছর ধরে সরব তিনি। তাকে একাধিকবার আটক করেছে যোগী প্রশাসন। এর ‘বদলা’ নিতে যোগী আদিত্যনাথকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গোরক্ষপুরেই ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, রাবণ যোগীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সেখানে কংগ্রেস তাঁকে সমর্থন দিতে পারে। যদিও বিষয়টি চূড়ান্ত নয়। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবতে নারাজ রাবণ।

উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তদের একাংশ বলছেন, রাবণ খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারেন কয়েকটি কারণে। ২০১৭ সালে বিআরডি মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেনের অভাবে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক কাফিল খানকে যোগীর বারবার আটকের বিষয়টি অনেকেই মানতে পারেননি। সেই চিকিৎসক কাফিল খানও যোগীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

কাফিল নিজে না দাঁড়িয়ে রাবণের হয়ে প্রচার করলে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেতে পারে। এ ব্যাপারে কাফিলকে বোঝাতে সক্রিয় একটি গোষ্ঠী।

গোরক্ষপুরে একাধিক গোশালার দুরবস্থায় ক্ষুব্ধ হিন্দুদের অনেকে। সব মিলিয়ে যোগী কিছুটা চাপেই আছেন।

তবে এসব তত্ত্ব মানতে রাজি নন বিশ্লেষকদের বেশিরভাগই। তারা মনে করছেন, গোরক্ষপুর মঠের প্রধান হিসেবে গোরক্ষপুরবাসীর মধ্যে যোগী আদিত্যনাথের বিপুল প্রভাব রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে সঙ্ঘের সক্রিয় সংগঠন। গত কয়েক বছরে নিজের কেন্দ্রে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন যোগী।

তার ওপর উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলে ভোটের মেরুকরণ করতে মরিয়া স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির সব শীর্ষ নেতা। সেখানে বেকারত্ব বা উন্নয়নের বিষয়টি চলে গেছে পেছনের সারিতে। সব মিলিয়ে যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানেই আছেন আদিত্যনাথ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ