আদালতে ইমরান খান, গ্রেপ্তারের শঙ্কা

সিল্কসিটি নিউজ  ডেস্ক :

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান-তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান ইসলামাবাদের বিচারিক আদালত ভবনে পৌঁছেছেন। বহুল আলোচিত রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উপহার সরিয়ে নেওয়ার তোশাখানা মামলায় শনিবার বিশাল গাড়িবহর নিয়ে আদালত চত্বরে পৌঁছান তিনি।

আদালতে তোশাখানা মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, তোশাখানা মামলায় আজ ইমরান খানকে অভিযুক্ত করা হতে পারে। ইসলামাবাদ পুলিশ অভিযোগ করেছে, দলীয় কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করেছে।

ডননিউজটিভির তথ্য অনুযায়ী, পিটিআইয়ের বিশালসংখ্যক কর্মী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাহারা দিয়ে আদালত চত্বর পর্যন্ত গেছেন। কিন্তু আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে তাদেরকে চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (এডিএসজে) জাফর ইকবালের আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে পিটিআইয়ের এই নেতার। সম্পদের ঘোষণায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নেওয়া উপহারের বিবরণ গোপন করার অভিযোগে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ইমরানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য আদালতে হাজির হয়েছেন তিনি।

শনিবার সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পর লাহোরের বাসভবন থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ইমরানের গাড়িবহর। আদালতে যাওয়ার আগে এক ভিডিও বার্তায় সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এই টুইট করার সময় পর্যন্ত আদালতে পৌঁছাননি তিনি। পরে ইসলামাবাদ পুলিশ এক টুইটে জানায়, ইমরানের গাড়িবহর বিচারিক আদালতের একেবারে সামনে রয়েছে।

টুইটে ইসলামাবাদ পুলিশ জানায়, ‘রাজনৈতিক কর্মীদের রাস্তা ফাঁকা করে দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে, যাতে ইমরান খান আদালতে পৌঁছাতে পারেন।’

রাজনৈতিক কর্মীরা পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়তে শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করে পুলিশ। পুলিশের একটি গাড়িতেও পিটিআইয়ের কর্মীরা আগুন দিয়েছে বলেও দাবি করে পুলিশ। অপর এক টুইটে পুলিশ কথিত গোলাগুলির ছবি পোস্ট করেছে। পাকিস্তানের সরকারি-বেসরকারি সব টেলিভিশন চ্যানেলে ইমরান খানের আদালতে হাজিরা ও সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

• তোশাখানা মামলা

গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।

তোশাখানার নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা বা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।

ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।

গত আগস্টে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) সদস্য মোহসিন নওয়াজ রানঝা ইমরানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি।

এ সম্পর্কে গত ২২ আগস্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ ‍নির্বাচনক কমিশনকে দেওয়া এক চিঠিতে ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজের ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে নামমাত্র মূল্যে এসব উপহার নিয়েছেন এবং এসব উপহারের অধিকাংশই তিনি বিক্রি করেছেন।

উপহারের মধ্যে কিছু দামি হাতঘড়িও রয়েছে। এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি ২০ লাখ রুপি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ইমরান খান এসব উপহার গ্রহণ করেছিলেন বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন স্পিকার।