আড়ানীতে আহত আ’লীগের দুই নেতা-কর্মীর একজন আশঙ্কাজনক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থী শহিদুজ্জামান শাহীদের সমর্থক বজলুর রহমান ও তার ভাগ্নে আরিফ হোসেনকে বেধড়ক কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর সমর্থকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরনগর গ্রামের এই ঘটনা ঘটেছে।

আহত দুজন হলেন, আড়ানী পৌর এলাকার ৪ নম্বর নুরনগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান (৪৫) ও তাঁর ভাগনে আরিফ হোসেন (৩০)।

আহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরিফ হোসেনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে। আর রামেক হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে বজলুর রহমানকে। 

বজলুর অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামানের কাছ থেকে কেন্দ্র খরচের টাকা নিয়ে তিনি এবং তাঁর ভাগনে আরিফ বাড়ি ফিরছিলেন। আরিফ তাঁকে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দিতে বলছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলেন। নুরনগর রাস্তার মোড়ের কাছে আসতেই তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর ছেলে রাজুকে দেখেন। তাঁর সঙ্গে মুক্তার আলীর সমর্থক আশিক, সজল, শরীফ ছিলেন। এ ছাড়া মুখ বাঁধা আরও চারজন ছিলেন। মুক্তারের ছেলের হাতে চায়নিজ কুড়াল, আশিকের হাতে ছুরি ছিল। তাঁরা ওখানে কী করছেন, জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশিক তাঁর বগলের নিচ দিয়ে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। তিনি পড়ে যান। পরে মুখ বাঁধা অন্যরা এসে উপর্যুপরি তাঁর পিঠের ওপরে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকেন। তিনি মারা গেছেন ভেবে বালুর মধ্যে তাঁকে ফেলে চলে যান। এরপর হাসপাতালে এসে জানতে পারেন তাঁর ভাগনের পেটেও আশিক ছুরি চালিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, নৌকার প্রার্থীকে ফোন করে তিনি জানতে পেরেছেন হামলার শিকার ও হামলাকারীরা পরস্পরের আত্মীয়। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁরা নৌকার সমর্থক। আর যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

উল্লেখ্য, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় আড়ানী পৌরবাজারের তালতলা এলাকায় আ.লীগের প্রার্থী ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ গণসংযোগ শেষে আড়ানী বাজারের তালতলায় পথসভায় করছিল। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী ও তার সমর্থকরা ১৫ থেকে ২০ জন অতর্কীতভাবে হামলা চালায় এবং পরে তারা মসজিদের মাইকে লোকজনকে ডেকে মুক্তার আলীসহ তার দল নিয়ে নৌকার প্রার্থীর দুটি অফিস ভাংচুর, ৫টি মোটরসাইকেল, শতাধিক দোকান ভাংচর করে লুটপাট করে নিয়ে যায় বলে আওয়ামীলীগ প্রর্থীর কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ। তবে এ বিষয়ে মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থকেরা মাইকিং করে জানান দেন যে তাদের গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ করে হামলা করে মেরে ফেলা হচ্ছে।

এই ঘটনায় নৌকার নির্বাচন কমিটির আহবায়ক আবদুল মতিন মতি বাদি হয়ে মুক্তার আলীকে প্রধান আসামী করে ৫০ জনে নাম উল্লেখ করে ৫০০/৬০০ জনের নামে মামলা বিস্ফোরণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় মিলন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মিলন সাংবাদিকদের আহত করে ক্যামেরা ও মোবাইল ভাংচুর করে।

এই ঘটনায় আহত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের সমর্থক তুষার আহমেদ, সোহান আহমেদ, ইসলাম উদ্দিন, লাটু হোসেন, ইফসুফ আলী, সাবাজ আলীসহ প্রায় ২৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এই ঘটনার জের ধরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় নৌকার সমর্থক ফাকরুক হোসেন নামের এক কর্মীকে মুক্তার নিজে ও তার লোকজন মারপিটের ঘটনায় আবারও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

এদিকে, গত ৮ জানুয়ারি দুপুরে আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মুক্তারের সমর্থকরা মাছরাঙা টেলিভিশন রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল এবং দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়।

স/অ

আরো পড়ুন …আড়ানীতে আ’লীগের দুই নেতা-কর্মীকে কুপিয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা