সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
শুভ জন্মাষ্টমী হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র জন্মতিথি। সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথিকে ভক্তরা শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
দেশের হিন্দু সম্প্রদায় আজ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করবেন।
হিন্দু পুরাণ মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস- পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়-নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল।
দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্মাষ্টমীর দিনটি সরকারি ছুটির দিন। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করা হয়েছে। মন্দির ছাড়াও ঘরে ঘরে ভক্তরা উপবাস থেকে জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা ও পূজা করবেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষে দেশ ও দেশের বাইরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এ উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিলো শ্রীকৃষ্ণের মূল সাধনা। যেখানে অন্যায় অবিচার দেখেছেন সেখানেই শ্রীকৃষ্ণ আপন মহিমায় আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি সর্বদা মানবতার মুক্তির পথ খুঁজেছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও আরাধনার মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির আবহ সৃজনে তাঁর আদর্শ সমভাবে প্রযোজ্য।
আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ঐক্যবোধ আর ধর্মনিরপেক্ষতা এ দেশের মানুষের ধর্ম। আবহমানকাল থেকে এ দেশের সকল ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে। সব ধর্মের মূল বাণী মানব কল্যাণ।
এ উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে দেশের সকল নাগরিকের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরো সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে আসছেন। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমাদের সরকার দেশের বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরো সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।’
তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে দু-দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, রাত ৯ টায় শ্রীকৃষ্ণ পূজা।
এছাড়াও বিকেল ৩ টায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলে অংশগহণ। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন । বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ পরিদর্শক আছাদুজ্জামান মিয়া।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল জানান, মিছিলটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকার্ট- শিক্ষাভবন হয়ে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার-গোলাপ শাহ মাজার-গুলিস্তান মোড়-নবাবপুর রোড-রায় সাহেব বাজার-বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামীকাল শনিবার বিকাল ৪টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা । এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আইন মন্ত্রানালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ আজ এক বিবৃতিতে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সূত্র: রাইজিংবিডি