সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এ উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ ঐতিহাসিক দিবসে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।

বাংলাদেশ ও ইউনেস্কো আগামী বছর যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য তার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা করছি, বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমারও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযুক্তির অভিজাত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকারের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন ভাবনা ও এর সফল বাস্তবায়নের ফলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সড়ক, রেল, নৌ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তিনি বিশ্বাস করতেন, ছয় দফা-এগারো দফার মাধ্যমে শাসনতন্ত্র প্রস্তুত করতে বাংলার জনগণ তাকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জনগণের এ রায়কে উপেক্ষা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে শুরু করে প্রহসন। বাংলার গরিব-দুঃখী নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে।

তিনি বলেন, জাতির চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে ঘোষণা করেন ‘… প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। … এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নির্জন কারাগারে পাঠায়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস নিভৃত কারাগারে তিনি অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি বাঙালির জয়গান গেয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। জাতির পিতা ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন।

তিনি বলেন, তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে এক ভাষণে তিনি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন, সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। বাঙালি জাতি ফিরে পায় জাতির পিতাকে। বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তার অনুরোধে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

১০ অক্টোবর ১৯৭২ বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ পুরস্কারে ভূষিত করে এবং ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭২ বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষর করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশ দ্রুত বাংলাদেশেকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্য হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে অতি অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে মাত্র সাড়ে ৩ বছরেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এ ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। খুনিদের বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কূটনীতিকের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। পরে বিএনপি-জামায়াত সরকার এ ধারা অব্যাহত রাখে।

দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে। এ সরকার সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে। সেই থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারে মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।