আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যু আশংকা!

করোনাভাইরাসের কারণে টিকাদান, পুষ্টি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। লকডাউনের সময় পরিষেবা প্রাপ্তির সীমিত সুযোগ এবং অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে এপ্রিল মাসে কেবলমাত্র অর্ধেক শিশু তাদের নিয়মিত টিকা নিতে পেরেছে।

আর তীব্র অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সেবা গ্রহণের হার জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যবর্তী সময়ে ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যার কারণে আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে ২৮ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু আশংকা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথে মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণার বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থার (ইউনিসেফ)।

মঙ্গলবার (২৩ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ আরও উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে হুমকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ৬০ কোটি শিশু। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস এ অঞ্চলে। মহামারীটি এখানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা ৬০ কোটি শিশুর জীবনের ওপর যে ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা তুলে ধরে হয় ‘লাইভস আব এন্ডেড’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমু হোজুমি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর ক্রমবর্ধমান ক্ষতির প্রেক্ষাপটে শিশুদের ওপর এর প্রভাবে ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের জীবন রক্ষাকারী টিকাদান কার্যক্রম এবং পুষ্টিজনিত সেবা অব্যাহত রাখতে হবে এবং যেহেতু বাবা-মায়েরা এসব সেবা অনুসন্ধান করে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দেয়, তাই বাবা-মা স্বাস্থ্যকর্মী উভয় শ্রেণিই যাতে নিরাপদে থাকে এবং নিরাপদ বোধ করে সেটাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের স্কুলগুলোকেও যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে পুনরায় চালু করতে হবে এবং শিশুদের জন্য হেল্পলাইনগুলোকেও আমাদের চালু রাখতে হবে। ইউনিসেফ এ সবক্ষেত্রেই সরকারকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, টিকাদান, পুষ্টি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে, যা পরবর্তী ছয় মাসে ৪ লাখ ৫৯ হাজার শিশু ও মায়ের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে। লকডাউনের সময় পরিষেবা প্রাপ্তির সীমিত সুযোগ এবং অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে এপ্রিল মাসে কেবলমাত্র অর্ধেক শিশু তাদের নিয়মিত টিকা নিতে পেরেছে।

ইউনিসেফ জানায়, সারা দেশে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে তারা অপুষ্টির চিকিৎসায় ব্যবহৃত থেরাপিউটিক দুধের নতুন চালান সরবরাহ করেছে। যদিও তীব্র অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সেবা দেওয়ার হার জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যবর্তী সময়ে ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক জ্যাঁ গফ বলেন, লকডাউন এবং অন্যান্য পদক্ষেপসহ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে মহামারির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নানাভাবে শিশুদের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তবে শিশুদের ওপর অর্থনৈতিক সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হবে সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন মাত্রায়। এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে করোনাভাইরাস পুরো একটি প্রজন্মের আশা ও ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিতে পারে।