আইনজীবীর ফেসবুক একাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দিল বাংলাদেশের আদালত

আদালত সম্পর্কে আপত্তিকর এবং অবমাননাকর ফেসবুক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ একজন সিনিয়র আইনজীবীকে দুসপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে তার ফেসবুক একাউন্ট ব্লক করে দেয়ার জন্যও আদালত বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।

ইউনুস আলি আকন্দ নামে এই আইনজীবিকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশও দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে কারও ফেসবুক একাউন্ট ব্লক করে দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন আদালত তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে?

সিনিয়র আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগটি করা হয়েছে এটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে। অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, তিনিই আজ আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল আদালতে মিস্টার আকন্দের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলেন।

করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর অন্য অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশেও আদালতের অনেক কার্যক্রম এখন অনলাইনে, অর্থাৎ ভার্চুয়াল আদালতে করা হচ্ছে। সেখানে বিচারক এবং আইনজীবীরা অনলাইনেই হাজির হচ্ছেন।

অতিরিক্ত এটর্নি মুরাদ রেজা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ইউনুস আলি আকন্দ ফেসবুকে এমন অনেক পোস্ট দিয়েছেন, যাকে তারা আদালতের অবমাননা বলে মনে করছেন।

” মিস্টার আকন্দ একটি-দুটি নয়, গত কয়েকদিনে ফেসবুকে অনেকগুলো পোস্ট দিয়েছেন। এসব পোস্টে তিনি বাংলাদেশে এখন যে ভার্চুয়াল আদালত বসছে, সে সম্পর্কে খুবই গুরুতর কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এই ভার্চুয়াল আদালতে আসলে কারও লাভ হচ্ছে না, সরকারের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ভার্চুয়াল কোর্ট বসানো হয়েছে। এই ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যাপারে তিনি তদন্তেরও দাবি জানান। এটর্নি জেনারেলের অফিস মনে করছে, এগুলো খুবই আপত্তিকর পোস্ট,আদালতের জন্য অবমাননাকর। সেজন্যেই আমরা আজ এ বিষয়ে আপিল বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।”

মুরাদ রেজা জানান, এরপর আদালত মিস্টার ইউনুস আলী আকন্দকে দু সপ্তাহের জন্য আইনজীবী হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে, অর্থাৎ তিনি এই দুই সপ্তাহ কোন প্র্যকটিস করতে পারবে না। একই সঙ্গে তার ফেসবুক পোস্টগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশই শুধু নয়, আদালত একই সঙ্গে ফেসবুক একাউন্টটি ব্লক করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে।

ইউনুস আলী আকন্দ: 'বুঝতে পারছি না কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনলো'
 

বাংলাদেশে এরকম নির্দেশ অভূতপূর্ব বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত কারও ফেসবুক একাউন্ট আদালত ব্লক করে দিতে বলেছে, এমন নজির নেই।

মুরাদ রেজা বলেন, “ইউনুস আলী আকন্দ বেশ প্রবীন এবং সিনিয়র একজন আইনজীবী। কী বললে আদালতের অবমাননা হয়, কী বললে হয় না, সেটা উনার বেশ ভালো করে জানা থাকার কথা।”

এ ব্যাপারে ইউনুস আলী আকন্দের বক্তব্য কী?

ইউনুস আলি আকন্দ আপিল বিভাগের বেশ সিনিয়র একজন আইনজীবি।

মিস্টার আকন্দ বলেছেন, ভার্চুয়াল আদালতের আজকের নির্দেশ সম্পর্কে তিনি কয়েকটি নিউজ সাইটের রিপোর্ট দেখে প্রথম জানতে পারেন। তার বিরুদ্ধে যে এরকম অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা তার আগে জানা ছিল না।

ফেসবুকে তিনি আদালতের অবমাননা হয়, এমন কোন পোস্ট দেয়ার কথাও অস্বীকার করছেন।

মিস্টার আকন্দ দাবি করছেন, করোনাভাইরাস মহামারির আগে পর্যন্ত তার কোন ফেসবুক একাউন্ট পর্যন্ত ছিল না, এমনকি কোন স্মার্টফোনও ছিল না। এখন যেহেতু ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়েছে, তাই তিনি একটি স্মার্টফোন নিয়েছেন এবং কয়েকমাস আগে একটি ফেসবুক একাউন্টও খুলেছেন। সেখানে তিনি মাঝে মধ্যে নানা পোস্ট দিয়েছেন, কিন্তু সেখানে আদালত অবমাননার মতো কিছু ছিল বলে তিনি মনে করতে পারছেন না।

তবে, তিনি জানিয়েছেন, তিনি বরং বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের জন্যই সোচ্চার ছিলেন।

মিস্টার আকন্দ জানিয়েছেন, তিনি আদালতে যাবেন, এবং সেখানে গিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরবেন।

 

সূত্রঃ বিবিসি