অভাবের কারণে দুই শিশু সন্তানকে গলাকেটে বাবার আত্মহত্যাচেষ্টা

রাজধানীর হাজারীবাগে দুই শিশু সন্তানের গলাকেটে নিজেই আত্মহত্যাচেষ্টা করেছেন এক বাবা। বুধবার রাজধানীর হাজারীবাগের বটতলা বাজার এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর দুই শিশু সন্তান ও বাবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসাধীন কন্যা শিশু জারিন হাসান রোজার (৬) মৃত্যু হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট থেকে সৃষ্ট হতাশাই এ ঘটনার নেপথ্য কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

ঢামেক হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় বাবা জাবেদ হাসান (৪৮) এবং ছেলে রিজন হাসান (১৩) চিকিৎসাধীন। তারা শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। এ ঘটনায় জাবেদের স্ত্রী রিমা আক্তার সামান্য আহত হয়েছেন। রিমার গলার বাম পাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আব্দুল­াহিল কাফী যুগান্তরকে বলেন, অর্থনৈতিক সংকট থেকে সৃষ্ট হতাশা থেকেই সে এই কাজ করেছে বলে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি। জাবেদের ভাই এবং স্ত্রী জানিয়েছে, জাবেদ ঋণগ্রস্থ ছিল। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ধার-দেনা করে চলতো সে। তার ব্যবসাও ভালো যাচ্ছিল না। এতটুকুই জানতে পেরেছি। তদন্ত করে বিস্তারিত বলা যাবে।

উদ্ধারকারী প্রতিবেশী ও পুলিশ সূত্র বলছে, হাজারীবাগের বটতলা বাজার এলাকার ১০ নম্বর গলিতে একটি দোতলা টিনশেড বাড়ি রয়েছে জাবেদের। ওই বাড়ির দোতলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। মোবাইল রিচার্জের একটি দোকান রয়েছে জাবেদের। করোনার কারণে তার ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন উৎস থেকে ৬/ লাখ টাকা ঋণ নেন। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে স্ত্রী দোতলা থেকে নিচতলায় এলে জাবেদ দুই সন্তানকে গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করে।

এক প্রতিবেশি জানান, চিৎকার শুনে স্ত্রী রিমা উপরে গেলে তাকেও আঘাত করার চেষ্টা করে। এমনকি নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন জাবেদ। পরে পরিবারের সদস্যরা জাবেদ ও তার দুই সন্তানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রিমা হাসান জানান, চিৎকার শুনে নিচতলা থেকে দোতলায় যান তিনি। কী কারণে স্বামী এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

জাবেদের ভাই মেহেদী হাসান জানান, ঘটনার সময় জাবেদের স্ত্রী রিমা বাসার নিচে ছিলেন। হঠাৎ চিৎকার শুনে স্বজনরা ঘরে ঘরে ঢুকে দেখেন তিনজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের তিন জনের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। পরে তাদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রোজাকে মৃত ঘোষণা করেন। যুগান্তর