অবৈধভাবে ওয়াসার পানি বিক্রি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গ্রাহকদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি বিক্রি করতে পানির পাম্প হাউসের পাশে এটিএম বুথ বসিয়েছে ওয়াসা। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি সেই বুথ থেকে কম দামে পানি কিনে বেশি দামে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বলছে, এভাবে পানি বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ।

ওয়াসার এটিএম বুথ থেকে জারে ভরে অবৈধভাবে পানি বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বিএসটিআই। চিঠিতে বলা হয়, এভাবে পানি বিক্রি প্রতারণার শামিল এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (সিএম) রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এটিএমের মাধ্যমে পানি বিক্রির উদ্যোগটি মহৎ। কিন্তু এখান থেকে ময়লা, নোংরা জারে করে পানি হোটেল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে একাধিক এটিএম সিলগালা করা হয়। শেষে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, বস্তিবাসী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি—যাঁদের বৈধ সংযোগ নেই, এমনকি পথচারীদের নিরাপদ পানি দিতে মূলত এটিএম সেবা চালু করা হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন কমিটির সদস্যসচিব ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, এটিএম বুথের মাধ্যমে পানি বিক্রির বিষয়টি প্রহসন ও প্রতারণামূলক। ব্যবসার ফাঁদে ফেলে পানি বিক্রির নামে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া অপরাধ।

ওয়াসা যৌথভাবে ‘ড্রিংক ওয়েল’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে বুথগুলো বসিয়েছে। পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্প হিসেবে ওয়াসা ২০১৬ সালে ফকিরাপুলে অবস্থিত অঞ্চল-৬ কার্যালয় এলাকায় এ ধরনের বুথ তৈরি করে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে মুগদা, বাসাবোসহ বিভিন্ন স্থানে এই বুথ বসানো হয়। বর্তমানে ওয়াসার ৯৫টি পাম্প হাউসের পাশে এটিএম বুথ থেকে গ্রাহকেরা পানি সংগ্রহ করতে পারছেন। আগামী বছরের মধ্যে ৩০০টি পাম্প হাউসে এ ধরনের বুথ বসবে।

এটিএম থেকে পানি সংগ্রহ করতে গ্রাহকদের ২০০ টাকা ফেরতযোগ্য জামানত দিয়ে একটি কার্ড নিতে হয়। এরপর এটিএম ব্যবহারকারীকে দেওয়া হয় প্রিপেইড স্মার্ট কার্ড। ওই কার্ডে টাকা ঢুকিয়ে (রিচার্জ) পানি কেনা যায়। প্রতি লিটারের দাম ৪০ পয়সা।

১৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফকিরাপুল পানির পাম্পের এটিএম বুথে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি নীল রঙের দুটি জারে বুথ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। জারগুলো হোটেল বা চায়ের দোকানে ‘ফিল্টার’ পানির জার হিসেবে পরিচিত।

জারে পানি সংগ্রহ করা ব্যক্তি নিজের পরিচয় দিতে চাননি। তিনি বলেন, এগুলো নিজেদের বাসায় ব্যবহার করার জন্য নিয়েছেন। কোনো হোটেলে বা দোকানে বিক্রি বা ব্যবহার করার জন্য নয়। তিনি পানি সংগ্রহ করার পর আরেক ব্যক্তি আসেন সাদা রঙের একটি জারে পানি নিতে। তিনিও বলেন, ‘এই পানি বিক্রি করতে নিচ্ছি না।’

ফকিরাপুল পানির পাম্পের অপারেটর সুজন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পাম্প থেকে জারে পানি বিক্রি হয় না।’ জারে পানি নিতে দেখা গেছে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘ড্রিংক ওয়েল থেকে দুটির বেশি জারে পানি না দিতে বলেছে।’

ওয়াসার একটি এটিএমের দায়িত্বে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০ লিটারের একটি জার এটিএম থেকে ভরতে লাগে ৮ টাকা। দোকানে বা হোটেলে একেকটি জার ৫০ টাকায় সরবরাহ করা হয়। ওয়াসার গভীর নলকূপের পানি পরিষ্কার থাকে বলে অনেকে এখান থেকে জার ভরে নেয়।

এ বিষয়ে ড্রিংক ওয়েলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এটিএম বুথের পানির মূল সুবিধাভোগী নিম্ন আয়ের মানুষ। কিছু ব্যক্তি এটিএম থেকে অল্প দামে পানি নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে থাকতে পারে। এটি বন্ধে এটিএমের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সতর্ক করা হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার অঞ্চল-৬-এর নির্বাহী পরিচালক ইয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, কে বিক্রির জন্য, কে বাসায় ব্যবহারের জন্য পানি সংগ্রহ করছে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এটিএম থেকে পানি নিয়ে কেউ যদি বিক্রি করেন, সেটি গ্রাহকের নিজস্ব দায়।