অবসর নিয়ে এবার শহরকে বদলে দেয়ার কাজ করবেন অধ্যক্ষ হবিবুর

সাক্ষাতকার প্রদানকালে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান

আমজাদ হোসেন শিমুল:

‘রাজশাহী কলেজে যেমন পড়ে থাকা একটি কাগজের টুকরোও খুঁজে পাওয়া যায় না, ঠিক তেমনি রাজশাহী শহরের মধ্যে কোন মানুষ কাগজ ফেলবে না। অবসর সময়ে শিক্ষা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আমি এই কাজটিই করে যাবো এবং এটিকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলাম। রাজশাহী সিটি মেয়র শহরকে বদলে দেয়ার জন্য অনেক কাজকর্ম করছেন। আমি রাজশাহী কলেজের উৎসাহী এবং আগ্রহী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরী গড়ে তুলবো এবং এই কাজটি আমি আগামীকাল অবসরে যাওয়ার পরের দিন থেকেই শুরু করবো।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি উপলক্ষ্যে সিল্কসিটিনিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান অবসর সময়ে পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরী গড়তে এমন পরিকল্পনার কথা বলেন।

সাক্ষাতকারে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের ঘোষিত পর পর ৪ বার রাজশাহী কলেজ দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। বিদায়বেলায় আমি সুন্দর অনুভূতি নিয়ে যাচ্ছি। কেননা, শিক্ষার্থীদের আমরা ‘পজিটিভ মাইন্ড সেটআপ’ করতে পেরেছি। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের আরও যে অনেক কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো করতে তাদের মনোজগতে আগ্রহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট হলো শিক্ষার্থী। আমরা তাদেরকে দক্ষ মানব-সম্পদে পরিণত করার যে চেষ্টা করেছিলাম তাতে সফল। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের যে অনন্য এবং পৃথক হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি বিদায় বেলায় এমন অনুভূতি নিয়ে যেতে পারে আমিই নিজেই আনন্দিত। এমন সুন্দর শিক্ষার্থীদের রেখে অবসরে যেতে পেরে আমার অনুভূতি তাই অনন্য।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন বিশ^ব্যাংক টাকা ফেরত নিলেও পদ্মাসেতু আমরা নিজেরাই করতে পারবো। শেষ পর্যন্ত তিনি কিন্তু সফল হয়েছেন। এমনিভাবে রাজশাহী কলেজ নিয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমরা শপথ নিয়েছিলাম যে ‘আমরা পারবো, আমরাই পারবো’। এখানে আমার একক কোনো কৃতিত্ব ছিল না। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ সবাই এমনভাবে আমাকে সাহায্য করেছে যার কারণেই রাজশাহী কলেজকে পর পর চারবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করেছে।’

বিদায়বেলায় প্রিয় সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো ম্যাজিক নেই। ম্যাজিকটা হলো কাজ। কর্মকে ভালোবাসতে হবে। অনেক জ্ঞানী-গুণি, প-িত-মহাপ-িত এই কলেজের অধ্যক্ষ কিংবা শিক্ষক ছিলেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মূলভিত্তির ওপর এই কলেজ দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তার ওপর পরিস করছি মাত্র। কর্মকে যদি নিজের জীবন কিংবা সন্তানের মত ভালোবাসা যায় তাহলেই অসকল অসাধ্য কাজকে সাধন করা সম্ভব। আমি আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানাবো, আমার ২২ হাজার শিক্ষার্থী, ২৫০ জন শিক্ষক, ২০০ কর্মচারি। এতোগুলো লোকের ভালোবাসা যদি আমার এই উর্বর ভূমিতে (রাজশাহী কলেজ) পড়ে তাহলে এখানে তো সোনার ফসল ফলবেই।

উল্লেখ্য, ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজ এর পরে রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের তৃতীয় প্রাচীনতম কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ৬৮৫টি কলেজের মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে পর পর চারবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করে এই রাজশাহী কলেজ। আর এই মহান গৌরব অর্জনে পেছনের কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান। শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি হওয়ায় আগামীকাল বুধবার এই মহান শিক্ষাবিদকে কলেজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে।

এএইচ/এস