অবরুদ্ধ কক্সবাজারে আতঙ্কিত পর্যটকরা

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে আসামি করার প্রতিবাদে কক্সবাজার শহর অবরুদ্ধ করে রেখেছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।

আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে কক্সবাজার শহরের সব দোকান-পাট বাস-কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়র মুজিবুরের অনুসারীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কের মাঝখানে পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। ভাংচুর চালানো হয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। এ নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে শহরবাসী ও পর্যটকদের মাঝে।

তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনিরুল গিয়াস।

সূত্র জানায়, বুধবার রাতে শহরের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে একটি মার্কেটের সামনে আড্ডারত মুনাফ সিকদারকে (৩২) গুলি করা হয়। তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আহত মুনাফ সিকদার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে। ওরা গুলি করার সময় বলছিল ‘তুই মুজিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগছিস? মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে আরও লাগবি?’ এই বলে পেছন থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ ঘটনায় বক্তব্য নিতে সাংবাদিকদের ফোন না ধরলেও তার বাড়ির এলাকায় (বিমানবন্দর সড়কের মাথায়) একটি প্রতিবাদ সভায় মেয়র মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মুনাফ সিকদারকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

শুক্রবার এ প্রতিবাদ সভার দুই দিন পর রোববার, বিকালে মুনাফ সিকদারকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে প্রধান আসামি হয়েছেন মুজিবুর রহমান। এছাড়াও মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সাম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে আসামি করা হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাচেষ্টা ধারায় মেয়র মুজিবকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সমাবেশে মেয়র মুজিব বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যে ছেলেটা গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাকে একজন শিখিয়ে দিয়ে বলতেছে, বল— মেয়র মুজিবের নির্দেশে তোমাকে গুলি করা হয়েছে। সে শেখানো কথা বলেছে।

তিনি বলেন, আমি এ সমাবেশে বলতেছি, কারও যদি জায়গা বা একটা হোটেলও দখল করে থাকি প্রমাণ দেন, রাজনীতি ছেড়ে দেব, এ শহর থেকে চলে যাব।

এদিকে মেয়র মুজিবুরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার খবর প্রচার পাওয়ার পরপরই পুরো শহরে মেয়রের অনুসারী একদিকে বিক্ষোভ মিছিল করছে অন্যদিকে দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে। হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলীর প্রধান সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। এসব ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা না মেলায় শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা থেকে শুরু করে ফিশারিঘাট পর্যন্ত ও বিমানবন্দর সড়ক থেকে কলাতলী পর্যন্ত সব দোকানপাট জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাননি তাদের হামলা করতে উদ্যত হন বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং পাথর রেখে রাস্তার ব্লক করে রাখায় কলাতলী হতে বাস টার্মিনাল ও কলাতলী হতে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত উভয়পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়।

সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফেরা জিও-এনজিও কর্মকর্তাদের গাড়ির পাশাপাশি অনেক অ্যাম্বুলেন্স এবং পর্যটকদের গাড়িও ছিল। অনেক পর্যটক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হোটেলে ফিরেছেন। রাস্তার পাশের অনেক হোটেলের ফটক বন্ধ করে দেয় আতঙ্কিত কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি মুনাফকে গুলি করার নির্দেশ দিইনি। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে আমরা একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করব। কিন্তু সরকারদলীয় একজন শীর্ষ নেতাকে প্রধান আসামি করে পুলিশ হত্যা প্রচেষ্টা মামলা নথিভুক্ত করল। এতে প্রতীয়মান হয়, আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে। মিথ্যা মামলার খবর পেয়ে নেতাকর্মীরা হয়তো মাঠে নেমে বিক্ষোভ করছেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস বলেন, মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা  শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ কারণে হয়তো দোকানপাট বন্ধ করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। জেলার একজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এটা হতে পারে। তবে শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোথাও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি।

 

সূত্রঃ যুগান্তর