অন্তরালেই তারা….

শামসুজ্জোহা বাবু, গোদাগাড়ী:


দূর সময়, আর সু-সময়। সবসময় অন্তরালেই উন্নয়নমূলক কাজের শুরু থেকে ইতি পর্যন্ত। কখনো ত্রাণ, আবার কখনো অনুদান। নিজেরা নয়, সংশ্লিষ্টদের দিয়ে বন্টন করেন। শুধু তাই নয়, দেখভালের দায়িত্ব আবার তাদের কাঁধেই। এতো কিছুর পরেও অন্তরালে তারা। সরাকারের একটি দফতর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ (পিআইও)।

জানা গেছে,  প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কর্মহীনদের খাদ্য নিরাপত্তা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় দুস্থদের খাদ্য সহায়তা ও পুর্নবাসনের জন্য সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন  পিআইও সংশ্লিষ্টরা।

তারা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ, সামাজিক নিরাপত্তা সেবা, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা), গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর), গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (নগদ টাকা-টিআর), ভিজিএফ, অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন, গ্রামীণ মাটির রাস্তা টেকসই করার লক্ষে হেরিং বোন বল্ড (এইচবিবি) প্রকল্পসহ উপজেলা প্রশাসন, অন্য কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্বও পালন করতে হয় তাদের। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাদের (ডিআরআরও)।

বর্তমানে করোনার ভয়ভীতি উপেক্ষা করে অধিদপ্তর থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত জিআর চাল, নগদ অর্থ ও শিশু খাদ্য উপজেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ বরাবর উপবরাদ্দ প্রদান করা হয়। অতঃপর অপারেশন ম্যানুয়াল অনুসারে বরাদ্দ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে উপ-বরাদ্দ জারি, তালিকা তৈরি, বিতরণ প্রক্রিয়া, তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত সুষ্ঠভাবে অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী বিতরণে সার্বিক সহযোগিতার কাজটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা (পিআইও) করে চলেছেন।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে থেকে করোনা সংক্রান্ত সব কাজেও পিআইওরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। বিতরণ যেনো সঠিকভাবে হয় এজন্য পিআইওদের সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে কার্য সম্পন্ন করতে হয়। উপকারভোগীরা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্যসামগ্রী গ্রহণ করেন না। করোনাসহ যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের অধীনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ভূমিকা অপরিসীম। বিতরণে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব এবং পৌরসভার ক্ষেত্রে মেয়র, কাউন্সিলর ও সচিব। যেখানে প্রচার-প্রচারণ নিয়ে ব্যস্ত সবাই। সেখানে  অন্তরালেই থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা (পিআইও)।

দফতটি দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীনদের মুখে হাসি ফোটাতে ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু যুদ্ধের মাঠে তাদের প্রয়োজন মতো সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া দরকার। যথাযথ নিরাপত্তা ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন তারা। তবুও তাদের অফিসের নাম কেউ জানতে পারে না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এই উপজেলায় জি.আর বরাদ্দকৃত চাল ৪০৭.৫৫ মেঃটন নগদ অর্থ ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা, শুকনা খাবার ৫০ কার্টুন, শিশু খাদ্য (দুধ) ১ হাজার ৩ শত ৪০ প্যাকেট। মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত এই বরাদ্দ উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এসব চাল ও টাকা সংশ্লিষ্ট উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা তালিকা প্রস্তুত করে পিআইওর তত্ত্বাবধানে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তবে উপজেলায় বিতরণ প্রায় শেষের পথে আর সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম সরকার ।

এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার প্রকৌশলী আবু বাশির মুঠোফোনে জানান, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা পালন করে থাকি। আমরা প্রকাশ্যে যেতে চাই না। তবে আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা উচিত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো এক হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠিত হয়। ওই আইনে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে অতি দ্রুত অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নের দাবি জানাই। কারণ আমাদের অফিসে জনবল বেশি থাকলে সঠিক ভুক্তভোগীদের কাছে সুষ্ঠুভাবে সরকারি সাহায্য পৌঁছে যাবে।

 

স/আ