অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে পদ হারালেন গোদাগাড়ীর পাকড়ী ইউপি চেয়ারম্যান

পাকড়ী ইউপি চেয়ারম্যান। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি দায়ে পদ হারালেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিব সরকার। সম্প্রতি (০৪ মার্চ ২০২১) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবুজাফর রিপন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই ইউনিয়নের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। একই সাথে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৫ (২) মোতাবেক এব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আদেশটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, জেলার শ্রীরামপুর কবরস্থানে একাধিকবার বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ, কাবিখা, টিআর, পরিষদের ১% এবং এলজিএসপি অর্থ হতে একই খাতে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান। পাকড়ী ইউপি সদস্যগণের সাথে সমন্বয়হীনতা, পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রে অদক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন পাকা রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জালাল উদ্দিনকে প্রকল্প সভাপতি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে একই তারিখ ও সভার কার্যবিবরণী পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান নিজেই প্রকল্প সভাপতি হিসেবে প্রকল্প পরিচালনা করেন। এতে পরিষদের ১০ জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করলে এবং সরেজমিনে এটি তদন্তে অনাস্থা প্রস্তাবের অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইউপি সদস্যদের অনাস্থা প্রস্তাবটি প্রমাণের জন্য প্রথমে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৯ নং ধারা অনুযায়ী, গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বিশেষ সভা আহ্বান করে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে-পক্ষে ভোট গ্রহণ করেন। এতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১০টি ভোট পড়ে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গোদাগাড়ী উপজেলার ০৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় এবং বিশেষ সভায় উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবটি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে গৃহীত হওয়ায় বর্ণিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করা সমীচীন হবে না বলে বিবেচিত হয়। এজন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের

সুপারিশসহ অনাস্থা প্রস্তাবটি সরকার কর্তৃক স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৯ (১৩) ধারা অনুযায়ী অনুমোদিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবুজাফর রিপন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ’ানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৯ (১৩) ধারার বিধান অনুযায়ী সরকার কর্তৃক জনস্বার্থে অনাস্থা প্রস্তাবটি অনুমোদিত হওয়ায় ০৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাকিব সরকারের পদটি একই আইনের ৩৫ (১) (চ) ধারা অনুযায়ী শূন্য ঘোষণা করা হলো।

এব্যাপারে ৩নং পাকড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাকিব সরকার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মেম্বাররা অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করতেই পারে। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য আনিত অভিযোগগুলো সত্য নয়। ইউপি মেম্বাররা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতেই আমার বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র তারা করেছে। গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমি বলেছিলাম- তাকে ব্যতিরেকে অন্য আর যে কাউকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিলে ভালো হতো। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ জেলা প্রশাসক মহোদয়কে আমি চিঠি দিয়েছি। যদি আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আমি নির্দিধায় মেনে নেবো।’

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জানে আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার,  প্রজ্ঞাপন আমাদের হাতে  পৌঁছেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এএইচ/এস