অদ্ভুত মিল ম্যারাডোনা-কাস্ত্রোতে, দুই বন্ধুর মৃত্যুর তারিখ একই!

সদ্য প্রয়াত আর্জেন্টাইন ফুটবলঈশ্বর দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার দুঃসময়ের বন্ধু ছিলেন কিউবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো।

ফুটবলবিশ্বে এমনটিই মানা হয়।

১৯৮৬ সালে প্রথমবার কিউবা সফরে গিয়ে বিপ্লবী কাস্ত্রোর রাজকীয় সংবর্ধনা পান ম্যারাডোনা। তখন থেকেই বন্ধুত্ব তাদের।

বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে কাস্ট্রোকে ১০ নম্বর জার্সি উপহারও দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা।

একবার মাদকাসক্ত ম্যারাডোনার জীবন সংকটে পড়ে।

তখন কাউকে পাশে না পেলেও বন্ধু কাস্ত্রোই এগিয়ে আসেন।

সেই সময় ম্যারাডোনাকে নিজ দেশে আশ্রয় দেন কাস্ত্রো। লা পেড্রেরা ক্লিনিকে ব্যবস্থা করে দেন ম্যারাডোনার রিহ্যাবের।

সেই সময় কাস্ত্রো এগিয়ে না এলে ম্যারাডোনাকে প্রাণে বাঁচানো যেত না বলে মন্তব্য করেছেন বহু ফুটবলবোদ্ধা ও ম্যারাডোনার ঘনিষ্ঠজন।

আর ফিদেল কাস্ত্রো ও ম্যারাডোনার এই বন্ধুত্বকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে এক কাকতালীয় ঘটনা।

তা হলো- এই দুই কিংবদন্তির একই দিনে মৃত্যু ঘটল! ফারাক শুধু ৪ বছরের।

২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর মারা যান কিউবার প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো। আর ঠিক চার বছর পর বুধবার (২৫ নভেম্বর) অর্থাৎ একই তারিখে ঈশ্বরের কাছে চলে গেলেন ফুটবলঈশ্বর ম্যারাডোনা।

ম্যারাডোনা অনেকবারই বন্ধু কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করতে কিউবা গেছেন।

অবসরের পর একসময় চার বছর কিউবায় কাটিয়েছিলেন ম্যারাডোনা।

সেই সময় কাস্ত্রোর কাছে খেলা নিয়ে গল্প বলতেন ম্যারাডোনা। আর রাজনীতির পাঠ দিতেন কাস্ত্রো।

 

এসবেই ম্যারাডোনার নেশার আসক্তি কাটাতে সাহায্য করেছিলেন কাস্ত্রো।

ম্যারাডোনা একবার বলেছিলেন, ‘এমনকি রাত ২টার সময়ও ফোন করতেন কাস্ত্রো। আমিও সবসময় কথা বলতে প্রস্তুত থাকতাম। কোনো ইভেন্ট থাকলে জানতে চাইতেন, আমি যেতে চাই কিনা। এগুলো আমি ভুলব না।’

চার বছর আগে কাস্ত্রোর মৃত্যুর পর ম্যারাডোনা শোক জানিয়ে  কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন– আমার কাছে কাস্ত্রো ছিলেন দ্বিতীয় বাবার মতো। আর্জেন্টিনায় যখন আমার সামনে দরজাগুলো বন্ধ হচ্ছিল, তখন তিনি কিউবার দরজা খুলে দিয়েছিলেন।

কাস্ত্রোর মৃত্যুতে জাতীয় শোকে যোগ দিতে কিউবায় গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা।

ম্যারাডোনাকে যে পরম বন্ধু মেনেছিলেন কাস্ত্রো, তা তার দেয়া এক বক্তব্যেই বোঝা যায়।

কাস্ত্রো  বলেছিলেন, ম্যারাডোনা আমার সেরা বন্ধু। কোনো সন্দেহ নেই যে, কিউবার সঙ্গে ম্যারাডোনা বন্ধুত্ব রেখে গেছে কোনো পার্থিব লাভ ছাড়াই।

বন্ধুকে ভালোবেসে ম্যারাডোনাকে পায়ে কাস্ট্রোর মুখের উল্কিও আঁকতে দেখা গেছে বহুবার।

১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেয়া ম্যারাডোনাকে সর্বকালের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার বলা হয়।

গ্রেট প্লেয়ার হিসেবে অনেকে কালোমানিক পেলের পরেই ম্যারাডোনাকে স্থান দেন।

খেলোয়াড়ি জীবনে ম্যারাডোনা বোকা জুনিয়রস, নাপোলি আর বার্সেলোনার মতো দলের হয়ে খেলে বহু ইতিহাস গড়েছেন।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার নিজ বাসায় মারা যান এই কিংবদন্তি। তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।

 

সূত্রঃ যুগান্তর