বুধবার , ৩১ আগস্ট ২০১৬ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ঋণের টাকার অটো দুমড়ে-মুচড়ে দিলেন ট্রাফিক পুলিশের দুই কনস্টেবল

Paris
আগস্ট ৩১, ২০১৬ ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁদার টাকা না পেয়ে এক অটোচালকের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ট্রাফিক পুলিশের দুেই কনস্টেবলের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন জিরোপয়েন্ট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আব্দুল হামিদ ও আব্দুল মতিন।

 

তারা দুজনেই চাঁদার দাবিতে অটো চালক মাহবুব হোসেনকে দাঁড় করান। এরপর দুই হাজার টাকার দাবিতে একজন অটোতে চড়ে বসে রাস্তার মধ্যে নিয়ে গিয়ে মাহবুবকে মারপিট করেন। এসময় অটোটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খূঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

 

এই অটোটি ঋণের টাকা দিয়ে কয়েক মাস আগেই কিনেছিলেন মাহবুব। এরপর থেকে ওই অটো চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। মাঝে মাঝেই যাত্রী নিয়ে নওহাটা থেকে শহরে আসতেন।

 

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে নগরীর শিপাইপাড়া এলাকায় কেন্দত্রীয় কারাগারের সামনে মারপিটের সময় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারায় সেটি গিয়ে রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ওই অটোচালক মাহবুব হোসেন (৪০) গুরুতর আহত হন।

 

এ ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তার ঋণের টাকায় কেনা উপার্জনের একমাত্র অটোটি। এসময় টাকা ফেলে অটো থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান হামলাকারী ওই ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল।

Rajshahi photo-30-08-16-27 copy
পরে স্থানীয়রা এসে আহত মাহবুব হোসেনকে আরেকটি অটোরিকশাতে করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তাঁর বাড়ি পবা উপজেলার নওহাটা পৌর সদর এলাকায়। তিনি ওই এলাকার এরশাদ আলীর ছেলে।
এদিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে রাস্তার মধ্যে দিনে-দুপুরে ট্রাফিক পুলিশের এমন আচরণ দেখে হতবাক-ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন অপর অটোরিকশার যাত্রীসহ পথচারীরা। ঘটনার বিচার দাবিতে তারা ভাঙা অটোরিকশাটি রাস্তার মাঝখানে রেখে কিছুক্ষণ প্রতিবাদেও অংশ নেন। পরে পুলিশ এসে রাস্তা অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়।
আহত অটোচালক মাহবুব হোসেন জানান, গতকাল সকালে তিনি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হন। এরপর যাত্রী নিয়ে তিনি নগরীর জিরোপয়েন্টে আসেন। সেখানে আসার পরে দায়িত্বরত দু’জন ট্রাফিক পুলিশ মাহবুবের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অটো রিকশার কাগজপত্র দেখতে চান।

 

মাহবুব তার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হলে ওই দুই ট্রাফিক পুলিশ তাঁর নিকট থেকে ২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় টাকা দিতে অস্বীকার করেন মাহবুব।

Rajshahi photo-30-08-16-26 copy
মাহবুব আরো সিল্কসিটি নিউজকে জানান, টাকা না পেয়ে একজন ট্রাফিক পুলিশ তার অটোতে চড়ে বসে তাকে ট্রাফিক অফিসের দিকে যেতে বলেন। অটোটি আটক করা হবে বলে ট্রাফিক অফিসের দিকে মাহবুবকে নিয়ে ওই ট্রাফিক পুলিশ রওনা দেন। পথের মধ্যে আবারো টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন ওই ট্রাফিক পুলিশ। একপর্যায়ে মাহবুবের পাশে বসে থেকে তার অটোরিকশার টুলবক্স থেকে জোর করে টাকা বের করে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওই কনস্টেবল।

 

এতে বাধা দিতে গেলে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মাহবুবের মুখে ও হাতে কিল-ঘুঁষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোটি গিয়ে রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটিটে গিয়ে ধাক্কা খায়। এতে অটোটি দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার পাশাপাশি গুরুতর আহত হন মাহবুব। এ ঘটনার পরে অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যান ওই ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল।
প্রত্যক্ষদর্শী সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের অটোটি ঠিক পেছনেই ছিল। এরপর হঠাৎ দেখি সামনের অটোটি গিয়ে বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে ধাক্কা খেল। তার পরপরই আে অটোরিকশা থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেল একজন ট্রাফিক পুলিশ। আমরা ইচ্ছে করলে তাকে ধরতেও পারতাম। কিন্ত ট্রাফিক পুলিশের পোশাক গায়ে পরা আছে বলে তাকে ধরতে সাহস পায়নি। তবে ওই পুলিশ যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, সেটির বিচার হওয়া দরকার। এভাবে রাস্তায় নেমে প্রকাশ্যে গরিব মানুষের নিকট থেকে মারপিট করে চাঁদাবাজির ক্ষমতা রাষ্ট্র ট্রাফিক পুলিশকে দেয়নি।’

Rajshahi photo-30-08-16-29
আরেক যাত্রী রবিন বলেন, ‘অন্যায়ভাবে অটোচালককে মারপিট করা হয়েছে। এতে সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। তার অটোরিকশাটিও দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। গরিব মানুষের শেষ সম্বল নিয়ে এমন ন্যাক্কাজনক ঘটনা যারা ঘটাতে পারে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।

 

মঙ্গলবার দুপরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আহত অটো চালক মাহবুব রাস্তার ধারে বসে আছেন। তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে কেটে গিয়ে সেইদিক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। চোখের ওপরে এবং কপালেও আগাতের চিহ্ন ছিল। পায়ে অটো রিকশার কাচ ভেঙে কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তবে কপালে ও চোখের ওপরে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবলের কিল-ঘুঁসিতে ফোলা-জখমের সৃষ্টি হয় বলে দাবি করেন মাহবুব।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি জিল্লুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে অটো চালকের ধাক্কাধাক্কির পরে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করছেন ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ।
জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কোন দুজন ট্রাফিক পুলিশ এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।’

 

তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আব্দুল হামিদ ও আব্দুল মতিন। ঘটনার পর থেকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা করছেন।

 

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর