অছাত্র, বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের নিয়ে চলছে রাবি ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা করা হয়। এক বছর মেয়াদী কমিটি পার করছে পাঁচ বছর। এরই মধ্যে দলের অনেক সিনিয়র নেতার পড়াশোনা হয়েছে, কেউ চাকরিতে প্রবেশ করেছেন, কেউবা চাকরি প্রত্যাশী। অনেকেই বিয়ে করে সংসারও শুরু করেছেন। যতই দিন গড়াচ্ছে ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতৃবৃন্দের সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। ফলে বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের দখলেই এখন আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বৃহত্তম এই শাখাটি। এতে সংগঠনের কাঠামো যেমন ভেঙ্গে পড়েছে তেমনি কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে কোন পরিচয় না পাওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সম্মেলনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া হওয়ায় অনেক সক্রিয় নেতাকর্মীরাও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে নতুন সম্মেলনের দাবিতে গতকাল রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) পদ প্রত্যাশিরা ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। মিছিল শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাথে জাতীয় প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

ক্যাম্পাস জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে শাখা ছাত্রলীগের ১৩ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক কমিটির প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৭ সালে এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে অন্তত ২শ জন এখন ক্যাম্পাস রাজনীতির বাহিরে। যাদের মধ্যে সহ-সভাপতি ১০ জন, ২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক মিলে মোট ২৫ জন বিবাহিত।

চাকরিতে প্রবেশ করেছেন ৩০ জন যাদের মধ্যে সহ-সভাপতি ১৬ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ জনসহ বিভিন্ন সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক রয়েছেন। এছাড়া সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত ও সমালোচিত ১৩৮ নিয়োগেও বেশ কয়েকজন চাকরি পেয়েছেন।

এদিকে পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন একশো জনেরও বেশি নেতাকর্মী। কমিটির মধ্যে যারা আছেন তারাও অনেকে পড়াশোনায় শেষ হওয়ায় চাকরির প্রস্তুতির নিচ্ছেন। ফলে সব মিলিয়ে কমিটির ৮০ শতাংশের বেশি সদস্য নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

পদপ্রত্যাশী ও মেয়াদোউত্তীর্ণ কমিটির সহ-সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন ও নতুন করে কমিটি হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে ও সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য নতুন কমিটি হওয়া বেশ প্রয়োজন। কারণ দীর্ঘদিন অনেকে রাজনীতি করে কোন পরিচয় পাননি তারা চরমভাবে হতাশ। ক্যাম্পাসে তাদের থাকার মত সেভাবে আর কোন রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। ফলে তারা ক্যাম্পাস ছাড়ছেন। এই পরিস্থতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া অতি জরুরি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আমাদের স্থানীয় অভিভাবক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সেটি পালনে আমরা প্রস্তুত আছি।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও পদ প্রত্যাশী তৌহিদ দুর্জয় বলেন, এক কমিটি দিয়ে পাঁচ বছর চলছে একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার কার্যক্রম। জাতীয় প্রোগ্রাম ছাড়া এই কমিটির সাথে আমরা আর কোন কাজ করবো না। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই আমরা নতুন করে সম্মেলনের তারিখ জানতে চাই। দ্রুত সম্মেলনের জন্য পদ প্রত্যাশীরা ক্যাম্পাসে মিছিলসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাবো।

বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের যেকোনো অধিকার আদায়ের আন্দোলনে কাজ করেছি। বর্তমানে কমিটির অনেকেই ক্যাম্পাসে রয়েছেন। কমিটি দেওয়ার সময় যারা তখন সিনিয়র ছিল এবং দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন তাদেরকে এই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তারা পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন পর চলে গেছেন। তাছাড়া যাদের পড়াশোনা শেষ তারা চলে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়তো অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে করেছেন। যেহেতু তারা অনেকদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছেন তাই সেই জায়গা থেকে এখনো আছেন। এটা সেন্ট্রালে জানানোর বিষয় না।’

সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনায় বন্ধের পর ক্যাম্পাস খুলেছে। করোনার আগে আমারা হল সম্মেলন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তখন সম্ভব হয়নি। আমারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে কথা বলেছি দ্রুত সময়ের মধ্যে হল সম্মেলনের বিষয়ে। পরবর্তীতে তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলনের আয়োজন করবো।’

নতুন সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বলেন, করোনার কারণে আসলে সম্মেলন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে গেছে। তবে জানুয়ারিতে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শেষ করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সশরীরে যাবো। তারপর ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিবেচনা করে দ্রুতই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে সেটি জানুয়ারির মধ্যেই হবে।

এএইচ/এস