রবিবার ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

NBIU Spiring 2025 New Ad

১৮-এর নিচে বয়সীরা ‘আপাতত’ স্মার্টকার্ড পাবে না

Paris
শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৯:৪৯ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ‘আপাতত’ স্মার্টকার্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১৮ বছরের নিচের নাগরিকরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ফের ছবি পরিবর্তন করবে। এ ছাড়া অনেকের ঠিকানাও পরিবর্তন হতে পারে। এসব বিবেচনায় দুবার যাতে স্মার্টকার্ড না দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুক্তি হিসেবে তারা আরও বলছেন, স্মার্টকার্ড প্রথমবার ফ্রি দেওয়া হয়। আর একটি স্মার্টকার্ড তৈরিতে ২০০ টাকার মতো ব্যয় হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমাতেই অপ্রাপ্তবয়স্কদের স্মার্টকার্ড না দিয়ে লেমিনেটিং করা কাগজের এনআইডি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ডের সংকট রয়েছে। এটিও একটি কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, স্মার্টকার্ড সরবরাহ সংক্রান্ত এক সভায় সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ১৮ বছরের নিচে যেসব নাগরিক পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন, তাদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সভার সিদ্ধান্তটি মাঠ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এনআইডি অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে আইডিইএ (স্মার্টকার্ড) প্রকল্পটি হাতে নেয় কমিশন।

তারপর দীর্ঘ চার বছর নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে স্মার্টকার্ড তৈরির দিকে এগোয় সংস্থাটি। এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ওই সময়ের নয় কোটি ভোটারের জন্য নয় কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। যার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর পরও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিতে উল্লিখিত কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সে বছরের শেষের দিকে অবার্থারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে সংস্থাটি। একই সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করে নিতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনামুল কবীরও কাজ করেন।

টেকনিক্যাল কমিটি সবকিছু বিচার বিবেচনা করে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। তার ভিত্তিতেই বিএমটিএফ’র সঙ্গে একটি চুক্তিতে যায় নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে স্মার্টকার্ড সরবরাহ করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবার্থার এক দশমিক ৫১ ডলার দরে সাত কোটি ৭৩ লাখ কার্ড সরবরাহ করতে পেরেছিল। সেই মোতাবেক আগের এক কোটি ২৭ লাখ নাগরিকের কার্ড ঘাটতি ছিল। এ কয় বছরে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ কোটি। সব মিলিয়ে আরও প্রায় তিন কোটির মতো ব্ল্যাংক কার্ড তৈরি এবং তাতে নাগরিকের তথ্য ইনপুট করে বিতরণে যেতে হবে। এজন্য আইডিইএ দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আর এ প্রকল্পের এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকার অনুমোদনও দিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় তিন কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল। এক্ষেত্রে কার্ডপ্রতি মূল্য ধরা হয়েছিল ১৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১১০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আগের দামে কার্ড সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই তারা কার্ডপ্রতি ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১৭২ টাকা দেওয়ার জন্য বলেছিল। এক্ষেত্রে তিন কোটি স্মার্টকার্ডের জন্য ১০৯ কোটি ৫০ লাখ বাড়তি প্রয়োজন হতো।

স্মার্টকার্ডের জন্য আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এতে তিন কোটি ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড ক্রয়, পার্সোলাইজেশন, স্ক্যানিং, প্যাকেজিং উপজেলা/থানায় পাঠানোর জন্য ৪৮০ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়। এজন্য কার্ডপ্রতি মোট ব্যয় ধরা হয় ১৬০ টাকা।

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় যে প্রস্তাব এসেছে, এতে প্রকল্প নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে ১২ টাকা বেশি। সেটিও কেবল ব্ল্যাংক কার্ড কেনার জন্য। এর সঙ্গে আরও যোগ হবে পার্সোলাইজেশন, স্ক্যানিং, প্যাকেজিং উপজেলা/থানায় পাঠানোর খরচ। তাই কমিটি কার্ডের বাড়তি দর অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিলেও কমিয়েছে মোট কার্ডের পরিমাণ। অর্থাৎ তিন কোটি কার্ডের পরিবর্তে দুই কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০টি কার্ড সংগ্রহের সিদ্ধান্ত দেয়। অবশিষ্ট কার্ডগুলো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্ব খাত থেকে ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে।


আরোও দেখুন
Paris