সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
গত বছরের জুন মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের মধ্যে প্রথম শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সারা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল সেই বৈঠকের দিকে। বর্ণাঢ্য ওই বৈঠকে দেড় পৃষ্ঠার যে দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, অনেক বিশ্লেষক সেটিকে ‘অস্পষ্ট এবং সারবস্তুহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। অনেকে তখন বলেছিলেন এই বৈঠকে উনেরই বিজয় হয়েছে। ট্রাম্প কিছুই পাননি।
দুই সপ্তাহের মধ্যে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে এই দুই নেতার মধ্যে দ্বিতীয় যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে আসলে কী অর্জন করা সম্ভব হবে—সেটা এখন একটা বড় প্রশ্ন।
হ্যানয়ের শীর্ষ বৈঠকে যোগদানের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে এবং বাইরে বিশেষজ্ঞরা কিছু ব্যবহারিক ধারণা উত্থাপন করছেন। তাঁরা বলছেন, বিপারমাণবিকীকরণের বিষয়টি হঠাৎ করে করার কোনো বিষয় নয়, বরং এটি একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া। যদি এটি সফল হয়, তাহলে উত্তর কোরিয়ার নিজের নিরাপত্তার পাশাপাশি গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কাজেই সেভাবেই আলোচনা হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক ড্যানিয়েল কোটস গত মাসে কংগ্রেসে বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ও উৎপাদনের সামর্থ্যের সবটি সম্ভবত ছেড়ে দেবে না। এমনকি তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ছাড় পাওয়ার জন্য আংশিক বিপারমাণবিকীকরণ নিয়ে আলোচনা করতে চাইছে।
ড্যানিয়েল কোটসের এ মন্তব্যের পর ট্রাম্প তাঁর এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। কোনো অস্ত্রের পরীক্ষা নেই, কোনো বন্দিবিনিময় নেই। উত্তর কোরিয়ার এখনই সুযোগ নিজেকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা।
উত্তর কোরিয়ায় ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিফেন বেইগুন গত ৩১ জানুয়ারি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া আমাদের ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা সবাই জানি যে এটা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
হ্যানয়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কী কী নিয়ে আলোচনা করবে, সে ব্যাপারে বেইগুন স্ট্যানফোর্ড ও কার্নেগি গ্রুপের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ধারণা নিয়েছেন।
কার্নেগি গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের সুপারিশের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে চীনা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কার্নেগির বিশেষজ্ঞরা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির পরিধি কীভাবে যাচাই করা যেতে পারে, সে বিষয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়েছেন। তবে সেই দেশে আধুনিক অবকাঠামোর অভাব এবং তথ্য সংরক্ষণে দুর্বলতার কারণে তাঁদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরা বলছেন, স্টকপাইলের প্রতিটি আইটেম হয়তো গোনা সম্ভব হবে না, তবে পিয়ংইয়ং চুক্তির শর্ত মেনে চলছে কি না তার নির্ভরযোগ্য সামগ্রিক মূল্যায়ন তাঁরা করতে পারবেন।
স্ট্যানফোর্ড টিম যাচাই করে দেখেছে কিম জং–উন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা স্থগিত এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সাইট বন্ধ করার পর উত্তর কোরিয়ার হুমকি কতখানি হ্রাস পেয়েছে। স্ট্যানফোর্ডের বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে না।
এ ধরনের নিশ্চয়তা কেবল মার্কিন প্রতিশ্রুতি বা কাগজের একটি চুক্তি দ্বারা অর্জিত হবে না। এ জন্য তাদের একসঙ্গে থাকা এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরযোগ্যতার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হবে। হয়তো সময়টা হতে পারে ১০ বছর।
স্ট্যানফোর্ড টিম বলছে, পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিত্যাগ করার পাশাপাশি পিয়ংইয়ংয়ের উচিত একটি বেসামরিক কর্মসূচি এবং একটি শান্তিপূর্ণ মহাকাশ কর্মসূচি গ্রহণ করা।
হ্যানয়ের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিঃসন্দেহে এমনভাবে আলোচনা শুরু করবেন, যাতে সবকিছু তাঁর অনুকূলে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞদের এমন পরামর্শ দিতে হবে, যাতে আলোচনা সফল হয় এবং একটি অর্থবহ চুক্তি হয়। আর যে চুক্তি হবে, তার বিশ্লেষণেও বিশেষজ্ঞদের সতর্ক থাকতে হবে।
স্ট্যানফোর্ডের বক্তৃতায় বেইগুন বলেছিলেন, ‘এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তুত। বলা যায় যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আমরা উত্তর কোরিয়া দখল করতে যাচ্ছি না। আমরা উত্তর কোরিয়ার সরকারকেও উচ্ছেদ করতে চাই না। আমরা একটি ভিন্ন রকম ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত, যা কি না বিপারমাণবিকীকরণের চেয়েও বড়।’ দ্বিতীয় বৈঠকের আবহাওয়া হয়তো প্রথম বৈঠকের মতো শান্ত থাকবে না। কিন্তু ধারণা করছি, সেখানে সত্যিকার অর্থেই কিছু অর্জিত হবে, যা কোরীয় উপদ্বীপের পাশাপাশি এই বিশ্বকে অধিকতর নিরাপদ করবে।